হোলি আর্টিজান: আমরা যেন ভুলে না যাই

0 comments 19 views 3 minutes read

১ জুলাই—বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ তারিখ। ২০১৬ সালের এই দিনটি কেবল একটি বর্বর জঙ্গি হামলার ঘটনা নয়, এটি ছিল আমাদের মানবতা, নিরাপত্তা ও সহনশীলতার চরম এক পরীক্ষার দিন। ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত সেই বিভীষিকাময় হামলায় আমরা হারিয়েছিলাম ২২টি মূল্যবান প্রাণ—দেশি-বিদেশি নাগরিক, পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন শিশু। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে।

এই হামলা কেবল গুলশান কিংবা ঢাকা নয়, কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনও।

শ্রদ্ধাঞ্জলি: স্মরণে শহীদরা

আমরা আজ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি—
হোলি আর্টিজানে নিহত সকল শহীদদের।
তাঁদের আত্মত্যাগ যেন আমাদের বিবেককে বারবার নাড়া দেয়—

“ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসা, সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা” নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।

তাঁরা কেউ ছিলেন শিক্ষার্থী, কেউ শিক্ষক, কেউ শিল্পী, কেউ আবার বাবা-মায়ের আদরের সন্তান।
তাদের হারিয়ে আমরা হারিয়েছি সম্ভাবনা, আলোকিত ভবিষ্যৎ, এবং সবচেয়ে বড় কথা—মানবতা।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি হোলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করে এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে।
প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জিম্মি অবস্থার পর ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই হামলায় নিহত হন—
• ১৭ জন বিদেশি নাগরিক,
• ৫ জন বাংলাদেশি,
• এবং ২ জন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা—মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও রাজীব চৌধুরী।

জঙ্গিবাদ ও আমাদের দায়িত্ব

হোলি আর্টিজান হামলা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উগ্রবাদ ও সহিংসতা কোনো ধর্মের নয়—এরা মানবতার শত্রু।
এই ঘটনার পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অনেক জঙ্গি সংগঠনকে দুর্বল করে দেয়।
তবে প্রতিরোধ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না—প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয় চেতনা, শিক্ষা ও সহানুভূতির আলোয়।

যা করতে হবে আমাদের

১. তরুণ প্রজন্মকে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা ও মানবিক মূল্যবোধে শিক্ষিত করতে হবে।
২. সহনশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ার জন্য পরিবার, শিক্ষক ও মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে।
3. জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযান নয়—চেতনার বিপ্লব প্রয়োজন।

উপসংহার: ভুলে গেলে চলবে না

হোলি আর্টিজান একটি ট্র্যাজেডি—তবে এটিই শেষ কথা নয়।
এটি আমাদের সামনে একটি অঙ্গীকার রেখে গেছে:
“জীবন ও মানবতার পক্ষেই আমাদের দাঁড়াতে হবে। মিছিল হতে হবে ভালোবাসার, প্রতিরোধ হতে হবে আলোর।”

আমরা যেন ভুলে না যাই—
এই বিভীষিকাময় রাত আমাদের শুধু কাঁদায়নি, আমাদের জাগিয়েও তুলেছে।

হোলি আর্টিজান—শুধু একটি স্মৃতি নয়, এটি আমাদের বিবেকের জাগরণ।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing