মান্নাদের খুব বিখ্যাত একটা গান আছে না? “সবাই তো সুখী হতে চায়/ তবু কেউ সুখী হয় কেউ হয় না/ জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা/ কপালে সবার নাকি সুখ সয় না”।
মান্নাদে জানাচ্ছেন, সুখি হতে নাকি কপাল লাগে। তাঁর কথা যদি সত্যি বলে ধরে নিই তাহলে আমার কপালটা বেশ ভালো ধরে নিতে হবে। কেননা আমি ভীষণ রকম সুখি একজন মানুষ। তবে আমার সুখি হওয়ার পেছনে গোপন কোনো তন্ত্রমন্ত্র নেই। যা আছে সেটি আমার পরিবার। আমার স্ত্রী, আমার পুত্র আর কন্যারা- এরা আমার জীবনটাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরে দিয়েছে। এরাই আমাকে সুখি মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে। এদের সরব উপস্থিতির কারণেই আজকের এই সুখ দিবসে সগর্বে নিজেকে আমি একজন সুখি মানুষ বলে দাবি করতে পারছি।
হ্যাঁ, আজকে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। পত্রিকাগুলো আজকে বিশ্বের সুখি দেশগুলোর একটি তালিকা ছেপেছে। সে তালিকায় ফিনল্যান্ডের লোকজন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝামেলা করা ইসরায়েলের লোকেরা সুখি হিসেবে আছেন চতুর্থ অবস্থানে। আমাদের এই আমেরিকার সুখি হিসেবে অবস্থান নিয়েছেন পনেরো নাম্বারে। আর আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম।
তো এই হিসেবে আমার কিন্তু ফিনল্যান্ডে থাকবার কথা, তাই নয়?
না, ব্যাপারটা অমন নয় আসলে। ব্যাপারটা হলো, আপনি নিজেই। আপনার সঙ্গে যিনি আপনার গাঁটছড়া সঙ্গী- যেমন আমার স্ত্রী। আমাদের সুখি হওয়ার জন্যে খুব বেশি উপাদান দরকার নেই আসলে। কেননা প্রাচুর্য কখনও সুখ আনে না। তবে সুখ প্রাচুর্য আনে বটে। আমাদের প্রাচুর্য আমাদের সন্তানেরা। আর বাকি যা আছে সে তো ওদেরই জন্যে। ওদের অবর্তমানে তার কি কোনো দাম থাকে? বলুন?
মান্নাদের গান দিয়ে শুরু করেছিলাম, এবারে নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর একটি গান দিয়ে শেষ করি। তিনি গেয়েছেন, ভালোবাসার সুখ সে তো শিশিরের জল/ পদ্মপাতায় যেন কাঁপে টলমল।
পদ্মপাতায় জল যেমন টলমল করতে থাকে, সুখটাও আসলে অমনই। ওকে ধরে রাখতে হয় দারুণ ভারসাম্যতে। নয়ত কখন কোন্ দিকে পড়ে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। আর একবার যদি জল মাটিতে পড়ে যায়, তাকে তুলবার সাধ্য কারও নেই। সে তখন মাটিতেই মিশে যায়।
আমরা দুজন দারুণ ভারসাম্যে আমাদের সুখেদের পদ্মপাতায় ধরে আছি। এভাবে যেন বাকিটা জীবন ধরে রাখতে পারি- দোয়া করবেন সকলে।