বৃষ্টি আমাকে মনে করিয়ে দেয় দেশের কথা। আর মনে করায় তোমাকে। আমাদের দেশ তো বৃষ্টির দেশ বলে পরিচিত। আমাদের ছেলেবেলায় বর্ষাকাল শুরুর আগে থেকেই সেকি বৃষ্টি! চলতেই থাকে। নদীনালা উপচে পথঘাট সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তখন মানুষের খুব কষ্ট। কিন্তু আমার তবুও ভালো লাগে বৃষ্টিত ভিজতে। বৃষ্টি এলেই দৌড়ে বেরিয়ে পড়তাম। আমাদের বয়সি অনেকে এভাবেই আসতো। তারপর নানা খেলা।
আর মনে পড়ে তোমার কথা। তোমাকে চেনার পর শুধু তোমাকে নিয়ে ভিজতে ইচ্ছে করত। কিন্তু তখনও তোমার সঙ্গে সম্পর্কটা তৈরি হয় নি। ঢাকা শহরে থাকতে বৃষ্টি এলেই ইচ্ছেটা বুক ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইত। একা একা ঢাকার রাস্তায় ভিজতে ভিজতে কতবার যে তোমাকে সঙ্গে পেতে আকুল হয়ে প্রার্থনা করেছি!
প্রার্থনার কারণে কিনা জানি না- আমার চাওয়া পূরণ হয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছেটা বাকি রয়ে গেছে। তোমাকে সঙ্গে পেয়েছি কিন্তু মুষলধারা বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তায় তোমাকে নিয়ে ভেজা হয় নি। এরপর কেটে গেল কতগুলো বছর! আমাদের ছেলেমেয়ে হলো, তারা বড় হয়ে গেল কিন্তু দেখ, ইচ্ছেটা তবু রয়েই গেছে।
নিউ ইয়র্কেও অনেক বৃষ্টি হয়। সাবওয়েগুলো তলিয়ে যায় পানির তলায়। শহরে বয়ে যায় বন্যা। কিন্তু আমাদের সেই বৃষ্টির সঙ্গে নিউ ইয়র্কের বৃষ্টির অনেক পার্থক্য। আর বৃষ্টিতে ভেজার মতো সেই অবসরের সময়ই কোথায়! ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর’- কার যেন লেখা? মনে নেই। যিনি লিখেছেন তার সঙ্গে এখন আমার অনেক মিল।
কাল থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনেক বৃষ্টি। আজকে আর পারা পারা গেল না। সকল ব্যস্ততা তুলে রেখে আজকে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ই পড়লাম ভিজতে। আজকে নিউ ইয়র্ক সিটি আমার তারুণ্যের ঢাকা শহর। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভিজব, ভিজতে ভিজতে হাঁটব, ফুটপাতের টং দোকানে চা খাবো। সেই পুরনো অনেক অনেক দিন ধরে পুষে রাখা ইচ্ছেগুলোর একটা আজ পূরণ হোক।