অস্ট্রেলিয়ার এক ভদ্রলোক, নাম জেমস হ্যারিসন। জেমস হ্যারিসন কি করেছেন জানেন? তিনি একাই ২০ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
অনেকেই মানুষের উপকার করতে চান, চান জীবন বাঁচাতে। কিন্তু তিনি ভাবেন সামর্থ্যের কথা, ভাবেন নিজের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা। এসব ভেবে ভেবে কারও জন্যে কিছু করতে পারছেন না দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু জেমস হ্যারিসনকে দেখুন। তিনি সামর্থ্য কিংবা নিজের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। সেকারণে নিজের যা আছে তাই নিয়ে ছুটে গেছেন মানুষের কাছে।
কিন্তু কি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন জেমস হ্যারিসন?
কিছুই নয় আসলে। আবার অনেক কিছু। জেমস হ্যারিসন নিজের শরীরের রক্ত দিয়েছিলেন মানুষকে। ২০ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা করেছেন দেখে গিনেস বুকে জেমস হ্যারিসনের নাম লিখে রাখা হয়েছে। কিন্তু জেমস হ্যারিসন যখন রক্ত দান করতে মানুষের কাছে ছুটে যেতেন তখন তো আর গিনেস বুক তার মাথায় ছিল না, তখন যে ভাবনাটি ছিল সেটি হলো একজন মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার আকুতি। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ৮১ বছর বয়সী মি. হ্যারিসন গত ১১ই মে এক হাজার ১৭৩ বারের মতো রক্ত দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় রক্তদানের বয়সসীমা নির্ধারিত থাকায় এটাই ছিল তাঁর সবশেষ রক্তদান।
আরও একটি তথ্য হলো, উন্নত দেশে সাধারণত যারা রক্তদান করেন তারা কাজটি করেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোতে সামাজিক দায়বদ্ধতার দরকারি এ সংস্কৃতি এখনও গড়ে ওঠে নি। সেকারণে সেখানে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা অনেক কম। ফলে কারও রক্ত প্রয়োজন হলে দেখা যায় তাদের পরিচিতজনেরাই প্রয়োজনে রক্ত দিচ্ছেন। রক্তদান নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে বলে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার অভাব আসলে।
অথচ রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। একজন মানুষ প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারে। বছরে তিনবার রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। রক্তদান করার মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এছাড়া নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে দুবার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম।
রক্তদানে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এমনি আরও অনেক উপকার পাওয়া যাবে। আর রক্তদান শুধু দাতার জন্যে নয়, যারা রক্ত নেবেন তাদের জন্যেই রক্তদান করা খুব দরকার। দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোন জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়।
এসব ভাবনা থেকেই আমরা শাহ্ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আসছে ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার একটি রক্তদান কর্মসূচি আহ্বান করেছি। জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে কর্মসূচি চলবে দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। ভয় নেই, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ড. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিকভাবে সুস্থ নারী ও পুরুষ রক্ত দিতে সক্ষম। শুধু পুরুষের ওজন হতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর অন্তত ৪৫ কেজি।
আসুন, রক্ত দিন জীবন বাঁচান।