মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা

0 comment 48 views

২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে  জানালো এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি অবশ্যই লিখতে হবে।

বিষয়টা আমার মাথায় ধরে নি। মুক্তিযোদ্ধা যিনি, তিনি তো অবশ্যই বীর। আমাদের জাতীয় বীর। তাহলে এভাবে আইন করে চাপিয়ে দেওয়া কেন!

আচ্ছা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা কত জন? মানে একাত্তরে কত জন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন? সহজ উত্তর হলো যারাই যেভাবে পেরেছে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, তারা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন, সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা কতজন? তাহলে গণ্ডিটা অনেক ছোট হয়ে আসবে। কিন্তু সেটা কত ছোট? আমাদের জানা নেই। আমরা স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধার সঠিক সংখ্যাটি কত বলতে পারি না। ৫২ বছরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের সংখ্যাও।

১৯৭২ সালে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যেকোন সংগঠিত দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। সে হিসেবেই তখন মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরযুক্ত সনদ যাদের কাছে ছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে যারা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন এমন মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারি, মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতে শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, এবং দেশে বা বিদেশে বিভিন্নভাবে অবদান রাখা ব্যক্তিরাও। তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সের সীমাও কয়েকবার নির্ধারণ করা হয়।

২০২১ সালের মার্চে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছিল সরকার। সে তালিকায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম ছিল। সে বছর ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা গত জানুয়ারি মাসে দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৫৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে মাসিক ভাতা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কত, সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে।

তবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ৪০,০০০ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছিল। সে ভাতা স্থগিত করার কথা হয়েছিল। পরে কি হয়েছে এখনও জানি না।

প্রতারণার করে যারা মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া খুবই দরকার। তবে এটাও ভাবা দরকার এদেরকে ভুয়া সনদ বানিয়ে দিয়ে কারা সহযোগিতা করেছে? সে সনদকে কারা স্বীকৃতি দিয়ে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে? তারা তো সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়েরই কর্মকর্তা-কর্মচারী।  এইসব  অযোগ্য, অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করাও কম জরুরি নয়। এদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

তিরিশ লক্ষ মানুষের প্রাণ আর তিন লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের নাম স্বাধীনতা ও বিজয়। মুক্তিযুদ্ধ কোনো ফাজলামো না।

মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছরেরও আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারলাম না। এ আমাদেরই লজ্জা।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing