আজ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস। অর্থাৎ আজকের দিনটি ছবির দিন। ছবি বললে তো সকলে ছবিকেই বুঝবেন। সে ছবি শিল্পীর আঁকা ছবিও হতে পারে। সেকারণে ফটোগ্রাফি শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ আলোকচিত্র করা হয়েছে। আলোকচিত্র হলো ক্যামেরা দিয়ে যে ছবি তোলা হয়। ক্যামেরার বাংলা প্রতিশব্দও তাই আলোকচিত্রগ্রাহী যন্ত্র। কিন্তু আরও আমরা যেমন কেদারাকে চেয়ার বলেই জানি তেমনি আলোকচিত্রগ্রাহী যন্ত্রকেও ক্যামেরা বলেই জানি।
ক্যামেরার ছবিতে আলোর খুব বড় ভূমিকা আছে বলে আলোকচিত্র বলা হয়। যদিও পৃথিবীর সবকিছুতে বস্তুত আলো-ছায়ারই খেলা। এমনি কি মানুষের চোখও আলো-ছায়ার খেলাতেই সীমাবদ্ধ।
ক্যামেরা আবিষ্কারের পেছনে জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাত ভাবেই দুটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করেছে। মানুষ স্বভাবত স্মৃতিকাতর প্রাণি। মানুষ নিজেকে সাজাতে যেমন ভালোবাসে ঠিক তেমনি নিজেকে দেখতেও ভালোবাসে। আরেকটি হলো, এই কারণে মানুষ নানাভাবে তার স্মৃতি ধরে রাখতে চায়। অন্যকেও উৎসাহিত করে। নানা দৃশ্যকে ধরে রাখতে তাই তার ভেতর তাগিদ তৈরি হতে থাকে। তারপর শুরু হয় আঁকাআঁকি। শুরু হয় কাপড়, কাগজ ও পাথরের ওপর ছবি আঁকার প্রচলন। আঁকতে থাকে মানুষ, ঐতিহাসিক ইমারত, নানা দৃশ্য আর সৌখিনতার সম্ভার। কিন্তু আঁকা ছবিতে শিল্প আছে বটে তবে নেই সন্তুষ্টি। হুবহু চাই যে!
তৈরি হলো ক্যামেরা। ফোটোগ্রাফিক ক্যামেরার অগ্রদূত ক্যামেরা অবস্কিউরা বলা হয়। তাতে বস্তুর ওলটানো প্রতিবিম্ব ধরা যেত। এটি খ্রিস্টপূর্ব কয়েকশ’ বছর আগের কথা। এরপর ১১তম শতাব্দীতে আরব পদার্থবিদ ইবনে আল-হাইসামের লেখা একটি বইতে ফোটোগ্রাফির ধারণা পাওয়া যায়। আর আধুনিক ক্যামেরা তৈরি হয় আনুমানিক ১৮১৬ সালে। নিসেফর নিপসে প্রথম সফলভাবে একটি ক্যামেরা ইমেজ তৈরি করেছিলেন। বিজ্ঞানী লুইস ডাগুয়ের সর্বপ্রথম ছবি তোলার ব্যবহারিক এ উপায় আবিষ্কার করেন। ১৮৩৭ সালে ‘ডেগুইরিয়ো টাইপ’ ফটোগ্রাফিক সিস্টেম আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই ছবি তোলার এই উপায়ের নাম দেওয়া হয় ডাগুয়েরিওটাইপ টাইপ ফটোগ্রাফি। তখন থেকেই ফটোগ্রাফিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ড্যাগুইরিয়ো টাইপ ফটোগ্রাফি দিয়েই এই শিল্প পথ চলতে শুরু করেছিল।
বর্তমানে ফোটোগ্রাফি আধুনিক শিল্প হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর স্মার্টফোনের সঙ্গে সঙ্গে ফটোগ্রাফি হয়ে উঠেছে সব বয়সের মানুষের চাহিদার অন্যতম একটি বিষয়। কেউ শখ করে, আবার কেউ পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন ফটোগ্রাফিকে।
১৮৩৯ সালে ফরাসি সরকার প্রথম ১৯ আগস্টকে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সে থেকেই দিবসটি উৎযাপন করে আসছে পুরো পৃথিবী।