বিবেচনায় রাখতে হবে সাধারণের স্বার্থ

0 comment 41 views

আজকে সাপ্তাহিক সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সাপ্তাহিক দেশ আজকে দু বছর বয়স পেরিয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করল। কাব্য করে বললে- দুই পেরিয়ে তিনে পা। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, পৃথিবীর আরেক প্রান্ত আমেরিকায় দু বছর আগে সাপ্তাহিক দেশ আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে বাংলাদেশে থেকে দূর হলেও বাংলা ভাষা আর বাঙালী থেকে দূরে নয়। নিউ ইয়র্কের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কাছে  টানা দু বছর সাপ্তাহিক দেশ আমেরিকা তো বটেই- পৃথিবীর নানান প্রান্তের খবরাখবর পরিবেশন করে আসছে। নিউ ইয়র্কে তো অনেক বাংলা পত্রিকা বেরয়। কিন্তু মাত্র দু বছর সময়ে সাপ্তাহিক দেশ নিজেকে নিউ ইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্র জগতে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে।

সংবাদপত্রের নিজস্ব একটা পরিচিতি আছে। সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি তিনটি মূল বিভাগের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। এরা হলো কার্যনির্বাহী বিভাগ, নির্বাচিত প্রতিনিধি বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগকেই রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভ বলা হয়। কিন্তু কোনো স্থাপনাকে মজবুত ভাবে দাঁড় করাতে গেলে চারটি স্তম্ভের দরকার পড়ে। আর রাষ্ট্রের চার নম্বর এই স্তম্ভটি হলো সংবাদপত্র। ফলে সংবাদপত্রের আরেকটি পরিচতি হলো সে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। সংবাদপত্র জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং জনমত তুলে ধরে। সংবাদপত্র প্রধান যে কাজটি করে সেটি হলো, সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে।

অনেকেই ভাবতে পারেন আমেরিকার মতো একটি দেশে, যে দেশটির ভাষা ইংরেজি- সেখানে একটা বাংলা পত্রিকা কি এমন গুরুত্ব বহন করে! তাঁদের জন্যে আমার একটা প্রশ্ন আছে, আচ্ছা বলুন তো এই নিউ ইয়র্কের বাংলা ভাষাভাষী ক’জন মানুষকে নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়তে দেখেছেন? আমার ধারণা এ প্রশ্নের উত্তরটি দেওয়ার আগে আপনাকে কিছুটা সময় হলেও ভাবতে হবে। ভেবে তারপর বলতে হবে। এখানে আসলে ইংরেজি জানা কিংবা না জানাটা গুরুত্ব বহন করে না। গুরুত্ব বহন করে ভাষাটা। মাতৃভাষা। মাতৃভাষার একটা স্বাচ্ছন্দ্যতা আছে যেটি ভিন্ন ভাষায় যতই পারদর্শিতা থাকুক, ওই স্বাচ্ছন্দ্যবোধটা পাওয়া যাবে না। ফলে ইংরেজি ভাষাভাষীর এই দেশে বাংলা ভাষার একটি পত্রিকাকে অবহেলা করা যাবে না।

 

ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর ২০১৮ সালের আমেরিকান কমিউনিটি জরিপ অনুসারে, ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। নিউ ইয়র্ক, প্যাটারসন, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন, ডিসি, আটলান্টিক সিটি এবং অন্যান্য শহরেও বাংলাদেশী আমেরিকানরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে, বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। লস অ্যাঞ্জেলেসের তৃতীয় স্ট্রিটের রাস্তাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লিটল বাংলাদেশ’ ঘোষণা করা হয়েছে।  গেল বছর  ব্রুকলিনের একটি রাস্তার নামকরণও একই নামে করা হয়েছে। এটিকে নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি অঞ্চলের নামকরণ করা হলো ‘লিটল বাংলাদেশ’। সেকারণে আমেরিকায় বাংলাদেশী কিংবা তাঁদের ভূমিকাকে ছোট করে দেখা যাবে না। বাংলাদেশি-আমেরিকান ফাহাদ সোলায়মান নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের উপদেষ্টা হয়েছেন। নির্বাচন এগিয়ে এলে আমেরিকান জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়ারা বাংলাদেশীদের সমর্থন পেতে হাত বাড়িয়ে দেন। আর এসব নির্বাচনে পক্ষে কিংবা বিপক্ষে জনমত তৈরিতে প্রধান ভূমিকাটি পালন করে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ- সংবাদপত্র। আমাদের সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকাটিও ওই চতুর্থ স্তম্ভের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ একটি ইট হলেও বটে।

সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিটি কলাম বিশ্লেষণধর্মী। যারা কলাম লেখেন তারা অর্থনীতি, সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে শুধু আমেরিকা নয়, স্বদেশি ও বিদেশি ঘটনাপ্রবাহের ওপর লিখে থাকেন। গেল দু বছরে শিক্ষা ও সংস্কৃতি, দুর্নীতি ও সুশাসনের ওপরও প্রকাশ করা হয়েছে অনেক লেখা। সাপ্তাহিক দেশ সাহিত্য পাতাটিও আকর্ষণীয়। তাদের ঈদসংখ্যা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেচ্ছিল। আর বর্ষপূর্তিতে তো সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের লেখা প্রকাশিত হয়।

আমরা আশা করব সাপ্তাহিক দেশ সত্যিকার অর্থেই দেশের মানুষের কণ্ঠ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সাপ্তাহিক দেশ সকল সংবাদকর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতে চাই, তাঁরা যেন সবসময় সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করবার মধ্য দিয়ে তাঁদের পথচলা অব্যাহত রাখেন।

সাপ্তাহিক দেশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পত্রিকাটির সম্পাদক, প্রকাশক, সংবাদকর্মী ও পাঠকসমাজকে একজন লেখক ও পাঠক হিসাবে আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

Leave a Comment

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing