মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি কী? কেউ বলবে তার বুদ্ধি। কেউ বলবে তার ভালোবাসা। আবার কেউ বলবে তার সহানুভূতি।
কিন্তু এই শক্তিই অনেক সময় মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।
কথাটা শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্য— অন্যের জন্য মায়া অনেক সময় নিজের জন্য অভিশাপ হয়ে ওঠে।
আমরা যারা একটু কোমল হৃদয়ের মানুষ, যারা অন্যের দুঃখে কেঁদে ফেলি, যারা নিজের কষ্টের চেয়ে অন্যের কষ্টকে বেশি গুরুত্ব দিই, তারা প্রায়ই ভুলে যাই যে আমাদেরও তো নিজের প্রতি দায়িত্ব আছে।
আমাদেরও তো নিজের জন্য বাঁচতে হবে, নিজের জন্য ভালো রাখতে হবে নিজেকে।
কিন্তু মায়া আমাদের এমন এক বাঁধনে বেঁধে রাখে যে, আমরা নিজের সবটুকু নিঃশেষ করে অন্যকে দিতে দিতে একসময় নিজের ভেতরে শূন্য হয়ে যাই।
আর এভাবে নিঃশেষ হওয়া মানুষ আর কিছু দিতে পারে না—না নিজের জন্য, না অন্যের জন্য।
মায়া খুব সহজেই মানুষের চোখে ধোঁকা আনে। আমরা ভাবি, অন্যকে ভালো রাখলেই নিজের ভালো থাকা আসবে।
আমরা ভাবি, যদি কারও কষ্ট একটু কমাতে পারি, তবে বোধহয় নিজের কষ্টও কমবে।
কিন্তু মায়া অনেক সময় আমাদের এমন সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেয়, যা আমাদের ঘাড় ভেঙে দেয়।
মায়া এমন কিছু ত্যাগ করতে শেখায়, যা করা আমাদের উচিত নয়।
মায়া এমন কিছু মানুষকে আঁকড়ে ধরতে শেখায়, যারা আসলে আমাদের প্রাপ্য নয়।
তাই কি বলা যায় না?
মায়া এক অদ্ভুত দ্বিমুখী তলোয়ার। একদিকে তা আমাদের মানুষ করে তোলে, আরেকদিকে তা আমাদের ভেতরের মানুষটাকে শেষ করে দেয়।
যখন আমরা অন্যের জন্য মায়া বোধ করি, তখন একটা কথা মনে রাখা দরকার—
অন্যের জন্য ত্যাগ করতে গিয়ে যেন নিজের জীবনটাই না বিসর্জন দিই।
কারণ, নিজের জীবনটাকে ভালোবাসা, নিজের স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা—এটিও এক বড় দায়িত্ব।
তাই মায়া হবে, সহানুভূতি থাকবে।
কিন্তু নিজের সীমারেখা ঠিক রাখতে শিখতে হবে।
মায়া যেন আমাদের অন্ধ না করে দেয়। মায়া যেন আমাদের আত্মবিসর্জনের পথে না ঠেলে দেয়।
মায়া যেন আমাদের ভেতরের আলোটাকে নিভিয়ে না ফেলে।
অন্যকে ভালো রাখার আগে নিজের মনের দরজায় এই প্রশ্নটা করতে হবে—
আমি কি ভালো আছি? আমি কি নিজেকে ধরে রাখতে পারছি?
যতক্ষণ নিজেকে ধরে রাখা যাবে, ততক্ষণই অন্যকে সত্যিকারের ভালো রাখা সম্ভব।
যখন মায়া নিজের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে ওঠে, তখন আর সেটা মায়া থাকে না—সেটা হয়ে ওঠে আত্মঘাতী দুর্বলতা।
নিজেকে বাঁচান। নিজের আলোকে জ্বালিয়ে রাখুন।
যতটুকু পারেন, অন্যকে দিন।
কিন্তু নিজের জীবনকে সমাধির দিকে ঠেলে দিয়ে নয়।
ভালো থাকবেন🤗ভালোবাসবেন।