ইংরেজি থিওলজির বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে ধর্মতত্ত্ব। ধর্ম তো একটি দর্শন। কিন্তু ধর্ম নিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি বিতর্ক করে অথবা বিবাদ করে, ত্রাস করে, তারা আসলে দর্শনের এই ব্যাপারটিই জানে না। একেকজন মানুষ একেক দর্শনে বিশ্বাসী হবেন- হতেই পারেন। কিন্তু এই বিতর্ক আর বিবাদ করা মানুষেরা এটি মেনে নিতে রাজি নন।
যে কোনো বিষয় নিয়েই বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু বিবাদ নয়, ত্রাস নয়। ত্রাস সভ্যতা বহির্ভূত আচরণ। তাছাড়া ধর্ম নিজেই নিষেধ করেছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। সেকারণে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে চাইলে আগে বুঝতে হবে ধর্ম বিষয়টা আসলে কি। ধর্ম হলো নির্দিষ্ট আচরণ ও অনুশীলন, নৈতিকতা ও বিশ্বাস। ধর্মের মূল ভিত্তিটি হলো বিশ্বাস।
ধর্ম কাকে বলে প্রশ্নটির উত্তরে যে সংজ্ঞাটি পাওয়া গেল সেটি হলো, “ধর্মের গুণ হল তার ‘এটারনিটি’ বা শাশ্বততা, যাহা নিত্য, যাহা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, যাহা চিরন্তন, যাহা সর্বকালীন। যাহা নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী নয়, বরং সমগ্ৰ বিশ্বের মনুষ্যমাত্রের কথা বলে, মানবহিতৈষী কথা বলে, যাহার কোনো সংস্থাপক নেই, তাহাই ধর্ম।”
পৃথিবীতে মানুষ আছে আটশ’ কোটি। এই আটশ’ কোটি মানুষদের কারও সঙ্গে কারও কোনো মিল নেই। মিল নেই মতামতেও। সবারই আলাদা আলাদা নিজস্ব মতামত রয়েছে। তাহলে মতবাদ থাকবে না কেন? থাকবে এবং আছে। ধর্মের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ তাদের সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে তাই। তাদের ধর্মাচরণও আলাদা। কিন্তু একটা বিষয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ- সেটা হলো ঈশ্বর একজনই।
তো ধর্মতত্ত্ব হলো ধর্ম, ধর্মের প্রভাব এবং ধর্মীয় সত্যের প্রকৃতি নিয়ে পদ্ধতিগত ও যৌক্তিক অধ্যয়ন। বিবাদ কিংবা ত্রাস নয়। সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। কোনো ধর্মই চুরি, ডাকাতি, নরহত্যা, ব্যভিচারের নির্দেশ দেয় না। কোনো ধর্মই মানুষকে হত্যা করতে নির্দেশ দেয় না। ধর্ম মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন, ন্যায়নীতি ও সুবিচারর ভিত্তিক শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ গতিশীল সুন্দর সামজ গঠন ও সংরক্ষণ করতে এবং সকল ধরনের অন্যায় থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ ও নির্দেশ দেয়।
তবে ধর্ম নিয়ে এত বিবাদ কেন?
এই বিবাদের কারণ হলো ধর্ম যে গ্রন্থটি তাদেরকে দিয়েছে সেটি তারা পাঠ করেন বটে কিন্তু বুঝে পাঠ করেন না। অথচ এই তারাই এই গ্রন্থটিকে বলছেন জীবন বিধান। এখন বলুন তো, জীবনে যে বিধান তারা প্রতিদিনই পাঠ করছেন, কিন্তু তাতে কি লিখে দেওয়া হয়েছে সেটিই বুঝতে পারছেন না- তাহলে বিতর্ক, বিবাদ আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তারা আসলে নিজেদের জীবনে কোন্ বিধান পালন করছেন?