টিভি লাইসেন্স: মধ্যবিত্ত আতঙ্কের দিনগুলো

0 comments 23 views 3 minutes read

একসময় আমাদের জীবনে টেলিভিশন ছিল রাজকীয় এক আসবাবের মতো। ঘরে টেলিভিশন আছে মানেই আপনি সমাজে খানিকটা মর্যাদা পেলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই মর্যাদার সঙ্গে চলে আসতো এক চিরচেনা আতঙ্ক — লাইসেন্সের কাগজ আছে তো?

আমাদের শৈশবে একটা কথা খুব শোনা যেত, “লাইসেন্স নবায়ন করেছো? না হলে কিন্তু টিভি নিয়ে যাবে!”। বিটিভির সেই একচেটিয়া রাজত্বের যুগে ‘বৈধ’ভাবে টেলিভিশন দেখতে হলে ফি দিয়ে লাইসেন্স করতে হতো। নতুন টিভি কিনলে ‘লাইসেন্স করান’ বিজ্ঞাপনও বিটিভিতে চলতো, আর মাঝেমধ্যে ছোট্ট খবরের ফাঁকে লাইসেন্স নবায়নের ‘তাগাদা’ শুনে মায়াবতী মা-বাবার কপালে ভাঁজ পড়ে যেত।

ঘরের কোণে কাঠের বাক্সে বসানো সাদা-কালো টেলিভিশনটার দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, আহা! এ আবার কেমন অপরাধ করতে পারে যে পুলিশ এসে নিয়ে যাবে? কিন্তু বাবা-মা বলতেন, “যারা লাইসেন্স করে না, তাদের বাসায় ম্যাজিস্ট্রেট হানা দেয়। ধরা পড়লে টিভি খুলে নিয়ে যায়।”

এ যেন এক অদ্ভুত ভীতি। তখনকার মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে লাইসেন্স নবায়নের টাকাটা খুব বেশি মনে হতো। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর নবায়ন করতেন না। আবার কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসবে ভয়ে ঠিক সময়মতো কাগজপত্র ঠিক রাখতেন।

আর ভিডিও প্লেয়ার থাকলে তো কথাই নেই! ভিডিও ক্যাসেট দেখার জন্যও আলাদা লাইসেন্স চাই। আমাদের এক প্রতিবেশীর ঘরে নতুন ভিসিআর আসার পর কয়েকদিন পরই ম্যাজিস্ট্রেট নাকি খবর পেয়ে চলে আসে। ব্যস, তখন পাড়া জুড়ে গুজব — “ওদের ভিডিও প্লেয়ার কেড়ে নিয়ে গেছে।”

বিটিভির লাইসেন্স ফি থেকে নাকি তাদের কার্যক্রম চলতো। এক চ্যানেলের যুগে দেশের মানুষের শিক্ষা, খবর আর বিনোদনের ভারটুকু তো তাদেরই ছিল। তাই লাইসেন্স ফি তাদের প্রাপ্যও ছিল।

আজকের দিনে যখন হাজারো চ্যানেল আর ইন্টারনেট হাতে নিয়ে আমরা বসে থাকি, তখন মনে হয় — সেই দিনগুলো কত সরল আর বর্ণিল ছিল! টেলিভিশন আসলে কেবল বিনোদনের যন্ত্র নয়, আমাদের শৈশবের ভয়ের এক ছোট্ট গল্পও বটে।

🖋️

টিভি লাইসেন্সের সেই দিনগুলো মনে পড়লে এখন আর আতঙ্ক নয়, কেবল মিষ্টি এক হাসি আসে… কত সহজ ছিল জীবন, কত অল্পতেই আনন্দ আর তুচ্ছতেই ভয় পেতাম আমরা।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing