‘হুঁশ’ শব্দটির অর্থ হলো চৈতন্য। মানে চেতনা। তো যিনি জ্ঞানী তিনিই চেওতনালব্ধ। ফলে তিনি সতর্ক। তিনি জানেন তাঁকে কি করতে হবে কিংবা কি করা উচিত।
শ্রীরামকৃষ্ণ মানুষকে আর ‘মানহুঁশ’ অভিধায় অভিহিত করে বলেছিলেন, যার হুঁশ আছে তার চৈতন্য আছে, যে নিশ্চিত জানে ঈশ্বর সত্য আর সব অনিত্য- সেই মানহুঁশ। তিনি আরও বলেছিলেন, চৈতন্য না হলে বৃথা মানুষ জন্ম’।
এখানে শ্রীরামকৃষ্ণ একজন দার্শনিক। তাঁর কথাটিও একটি দর্শন।
আমাদের একটি পরিচয় হলো আমরা বাঙালী মধ্যবিত্ত। কি পশ্চিমের বাঙালী কি পূবের- বাঙালীর একটি বিশেষ জন্ম-পরিচয় আছে। এদেশের মধ্যবিত্ত গড়ে উঠেছিল শাসকদের প্রয়োজন ও আনুকূল্যে। শাসকদের ইচ্ছেতে বিকশিতও হয়েছিল। তারমানে এই বিকাশ আআসলে নকল বিকাশ। তাদের দেখে দেখে বাঙালী শিখেছে, শিখতে শিখতে যতটা পারে গড়ে উঠেছে, বেড়ে উঠেছে। এই গড়ে ও বেড়ে ওঠাটা দেখতে হলে প্রবাসীদের দিকে তাকানো যেতে পারে। এরাও দেশেরই মানুষ কিন্তু চলনে বলনে এখন বিদেশি হয়ে উঠেছে।
অর্থাৎ কিনা এর অনেকাংশেই নকলের ছাপ : মুনিবেরটা দেখে দেখে শিখেছে, শিখতে শিখতে যতটা পারে গড়ে-বেড়ে উঠেছে। স্বদেশবাসী প্রবাসীর যথার্থ ছবি দেখতে হলে এই শ্রেণির দিকে তাকানো যেতে পারে । শ্রেণিটা দেশেরই, কিন্তু রকম-সকম বিদেশি। দেশের মানুষের মতো প্রবাসীদের জীবনেও অভাব আছে। কিন্তু অভাবের চেয়ে বেশি আছে অভাববোধ। বিত্তের চেয়ে বেশি আছে বিত্তের দেখানেপনা। আছে বড়াই। আছে ভয়। ওপরে ওঠা দরকার তার। তাই ভয়টা হলো পিছলে না পড়ে যায়। এইখানেই প্রধান অভাব- এই অভাবের নাম চৈতন্য।
সেকারণে বাঙালী এখনও যথার্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি।