কাক ও মানুষ

0 comment 72 views

হুমায়ুন আহমেদের একটি নাটকে সংলাপ ছিল, ‘পাখির রাজা কাউয়া’। সে সংলাপ শুনে সবাই হেসেছিল খুব।
কাউয়া বা কাক নিয়ে আকবর বীরবলেরও গল্প আছে-
সম্রাট আকবর হঠাৎ হঠাৎ তার সভাসদদের সামনে অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসতেন। একদিন তিনি এমনি করে হঠাৎ জানতে চাইলেন, এই নগরে কতগুলো কাক আছে?
আকবরের প্রশ্ন শুনে সবাই হা করে চেয়ে থাকল।
ওই মুহূর্তে রাজসভায় বীরবল প্রবেশ করল। কিন্তু বীরবল সঙ্গে সঙ্গে বলে দিল, জাঁহাপনা, এই নগরে ষাট হাজার তিনশ’ আঠারোটি কাক আছে।
আকবর বললেন, তুমি কি করে এতটা নিশ্চিত হলে বীরবল?
বীরবল বলল, জাহাঁপনা আপনার লোকদেরকে দিয়ে গুনে দেখেন। যদি আপনি এর বেশি পান তাহলে বুঝতে হবে এখানে কাকদের কিছু মেহমান এসেছে। আর যদি কম পান তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোথাও থেকে কিছু কাক মেহমান হয়ে বেড়াতে গেছে।
যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। সম্রাট আকবর বীরবলের বুদ্ধিমত্তায় আরও একবার চমৎকৃত হলেন।
তবে কাকের সংখ্যা গণনা করা কিংবা কাক শুমারি বিস্ময়কর কিছু নয়। ইউরোপ ও এশিয়ায় ৪৩ থেকে ২০৪ বিলিয়ন কাক রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। সে সংখ্যা বাড়ছেই। হাওয়াইয়ান ও মারিয়ান জাতের কাককে বিপন্ন বলে বিবেচনা করা হয়। একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই কাক রয়েছে।
একবার স্ট্যানফোর্ড মার্শমেলো এক্সপেরিমেন্টে কিছু মানবশিশু ও কাককে একই পরীক্ষার আওতায় আনা হলো। শিশুদের একটি করে উপহার দেওয়া হলো। আর কাকদেরকে একটি করে খাবার দিয়ে বলা হলো, পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে পারলে তাদেরকে দ্বিগুণ উপহার ও খাবার দেওয়া হবে। শিশুদের অনেকেই দ্বিগুণ উপহারের লোভে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগল। অনেকগুলো কাকও ঠিক তাই করল।
খুব প্রচলিত একটি কথা আছে- কাক কখনও কাকের মাংস খায় না। আরও একটি লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো, কোনো একটি কাক বিপদে পড়লে কিংবা তার জীবন বিপন্ন হলে অথবা মরে গেলে সে এলাকায় যত কাক আছে এসে ভিড় করে। তারপর নিজেদের কর্কশ কণ্ঠে চিৎকারে প্রতিবাদ করতে থাকে, সাহায্য চাইতে থাকে, বিলাপ করতে থাকে। বস্তুত কাক খুব সামাজিক প্রাণি। হয়ত সেকারণেই কাক খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, মানুষের মতোই। কিন্তু ক্ষমতা দখলের জন্য কাক অভ্যুত্থান ঘটায় না হয়ত তাদের রাষ্ট্র নেই বলে! তবে কাক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করে না। নিজের দরকার যা সেটা নিজেই খুঁজে নেয়। আরও একটা ব্যাপার, কাকদের কোনো রাজনৈতিক দল নেই। সেকারণে কোনো নেতা কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের তোষামোদে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকারও দরকার পড়ে না।
আচ্ছা বলুন তো, আমরা মানুষেরা তো সমাজবদ্ধ জীব। আমরা পৃথিবীর মাটিতে দাগ টেনে আলাদা দেশ তৈরি করে সীমানা এঁকেছি। নিজের নিজের মানচিত্র বানিয়েছি। অন্য দেশের লেজে পা বাধিয়ে সে মানচিত্র পরিবর্তন পরিবর্ধনও করেছি এবং করেই চলেছি। তাহলে আমরা কাক সমাজের চেয়ে কতটা উন্নত? আমরা কি কাকের চেয়ে অধিক সামাজিক?
আমি সম্রাট আকবর নই। আমার কোনো সভাসদও নেই, বীরবলও নেই তাই। সেকারণে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে হা করে কেউ তাকিয়ে থাকবে না কিংবা বীরবলের মতো বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর নিয়ে এগিয়ে আসবে না কেউ। আমরা যে বলি, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ- সেটি কেন বলি? ভিত্তিটি কি? ধর্মগ্রন্থ বলছে আশরাফুল মাখলুকাত- এইটিই কি ভিত্তি? তাহলে আমাদের মানুষদের নিজেদের অর্জনটা কি? দুর্নীতি? না যুদ্ধ? নাকি চাটুকারিতা?

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing