ঈর্ষা ও হিংসা শুধু একটি রিপু নয়, এটি একটি রোগ। এবং এই রোগে আক্রান্ত হন শুধুই দুর্বল মানুষ। কেননা মূলত হেরে যাওয়ার ভয় থেকেই ঈর্ষা ও হিংসার জন্ম। অন্য সব অনুভূতি বা আবেগের মতো ঈর্ষা ও হিংসাও একটি মানসিক অবস্থা।
ঈর্ষা ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য আছে। সূক্ষ্ম পার্থক্য। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি ঈর্ষাটা প্রকাশ করতে চান না। ফলে ঈর্ষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এক ধরনের লজ্জাবোধ। কিন্তু হিংসাতে ওই লজ্জাটুকু নেই। কেননা হিংসাতে থাকে ধ্বংস করতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তবে ঈর্ষা ও হিংসা করা দুই ব্যক্তিই মানসিকভাবে দুর্বল। খুব দুর্বল। দুর্বল বলেই সে ঈর্ষা ও হিংসাকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। এবং এই দুর্বলতাই তার ঈর্ষাকে, তার হিংসাকে আড়ালে থাকতে দেয় না। বিভিন্ন ভাবে বেরিয়ে আসে। আর তার সে ঈর্ষা ও হিংসার শিকার মানুষটি তার দিয়ে অবাক বিস্ময়ে নিশ্চুপে তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু ঈর্ষা ও হিংসায় কাতর লোকটি সে দৃষ্টি আর নিশ্চুপতা বুঝতে পারে না। কেননা হিংসার মধ্যে থাকে আক্রমণাত্মক ভাব। সে ভাব তার বোধবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এটিই ঈর্ষা ও হিংসার সেই সূক্ষ্ম পার্থক্য। ঈর্ষা মানুষকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে না। কিন্তু হিংসা সেটি করে। হিংসা সম্পর্কের নৈকট্য নিয়ে ভাবে না। কিন্তু ঈর্ষা ভাবে। যদিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক গঠনের ওপর। আর মানসিক গঠন গড়ে তোলে ব্যক্তির শিক্ষা, পরিবেশ ও সমাজ। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছন, ঈর্ষা, হিংসা ও ঘৃণা মূলত মানসিক রোগ। যার উৎপত্তি প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্যক্তি জীবনের সর্বত্রই সেটা ছড়িয়ে পরে। কর্মজীবনে যা প্রতিযোগিতামূলক ভাবেই ব্যাপকতা লাভ করে।
প্রতিযোগিতা হলো তুলনা। আমি ওর তুলনায় পারদর্শী, অথবা ও আমার তুলনায় পারদর্শী। মূলত ঈর্ষা ও হিংসা তৈরি হয় এই তুলনা থেকেই। অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা। ও এটা এভাবে পারে- আমি কেন পারি না? ওর এসব আছে- আমার কেন নেই। ওকে সবাই এত পছন্দ করে- আমাকে কেন করে না? এভাবে নিজের ভেতরে হীনমন্যতা জাগে। আস্তে আস্তে সেটা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করায়। এখানে অর্থনৈতিক কোনো ব্যাপার নেই।
ঈর্ষা সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। তারপর সে তার পথ ধরে চলতে চলতে একসময় হিংসায় পরিণত হয়। আর তখনই সেটি সীমাকে অতিক্রম অতিক্রম করে ফেলে। তখন অবনত সম্পর্ককে ধ্বংস করতে শুরু করে। সুতরাং হীনমন্যতায় ভুগে আর অন্যের রূপে ঈর্ষা লালন করে কোনো লাভ নেই। ঈর্ষা, হিংসা মানুষের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, আত্মসম্মানবোধকে ধ্বংস করে, জীবনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে।
মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে সকলেই প্রতিভা নিয়ে জন্মায় এবং কেউই কুৎসিত নয়। কেননা যদি প্রতিভা না থাকত তাহলে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে থাকা ছেলেমেয়েদেরকে উপোস করেই থাকতে থাকত।জীবনে তারা কিছুই করতে পারত না। আর যদি রূপ না থাকত তাহলে তাদের কারও জীবনেই প্রেম-বিয়ে নামক ব্যাপার ঘটত না।
তাই নিজের দিকে তাকান, একবার খুঁজে দেখুন, তাদের যা যা আছে, আপনারও তার সবই আছে। হয়ত তাদের চেয়ে বেশিই আছে। একটু চেষ্টা করলেই আমরা এই নেতিবাচক মনোভাবকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভেতরের ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি।