আপন দাম

0 comment 70 views

ইংরেজি প্রবাদ আছে, ব্লেসিং আর নট ভ্যালিড টিল দে আর গন। আমরা এই প্রবাদের বাংলা করেছি, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই। কিংবা কে জানে, হয়ত ইংরেজি থেকে বাংলা করি নি। কেননা ইংরেজি ভাষীরা যাকে গসপেল ট্রুথ বলছেন আমরা তাকেই ধ্রুব সত্য বা পরম সত্য বলছি। যুগে যুগে পণ্ডিত জনেরা নানান গবেষণার মধ্য দিয়ে এসব সত্য ও বাস্তবতা আবিষ্কার করেছেন। আবিষ্কার ও সৃষ্টি তো এক নয়! কলম্বাস যখন আমেরিকা আবিষ্কার করলেন তার মিলিয়ন বছর আগে থেকে আমেরিকা ওখানেই ছিল। শুধু সে যুগের মানুষ জানত না ওখানে একটা ভূখণ্ড রয়েছে।

বিষয়টা হলো, ব্লেসিং আর নট ভ্যালিড টিল দে আর গন একটি দুঃখজনক প্রবাদ। আপনার দাঁত যখন চলে গেল তখন আপনি বুঝতে পারলেন দাঁত সত্যিকার অর্থেই জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে কতটা জরুরি। কিন্তু এই বুঝতে পারার উপলব্ধি তখন একেবারেই কাজে লাগছে না। হারিয়ে গেলে সব জিনিস ফিরে পাওয়া যায় না। কিছু জিনিস আছে জীবনে একবারই আসে। এবং তার অমর্যাদা করলে চিরতরে হারিয়ে যায়।

একটা গল্প মনে পড়ল। ভীষণ মেধাবী এক নারী সব ছেড়ে-ছুঁড়ে ভালোবেসে সংসার পেতেছেন। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আর্কিটেক্ট হওয়ার মতো তার কাছে সংসার করাটাও জীবনের একটি লক্ষ্যের মতো হয়ে গেল। সংসারকে দারুণ ভালোবাসা আর মনোযোগে গুছিয়ে রাখে। বাড়ির সদস্যদের কোনও কিছুই কথাই ভাবতে হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, তার এই লক্ষ্যের মতো বানিয়ে ফেলা সংসারের বাকি সদস্যরা বুঝল না। এমনকি তার ভালোবাসার মানুষ স্বামীটিও একদিন বলে ফেলে, সারাদিন সে বাড়িতে বসে কি এমন কাজটি করে! সে নাকি একলাই এই সংসারের জন্যে খেটে মরছে!

তারপর… তারপর আর কি। তার ত্যাগ, তার অনুভূতি, তার ভালোবাসাকে এভাবে অমর্যাদা করাকে সে মেনে নিতে পারল না। অভিমান করে বাড়ি ছাড়ল। আর তখনই বাড়ির সকলের উপলব্ধিতে এল সে এই সংসারের জন্যে কতটা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে তখন। দাঁত পড়ে গেছে। ‘ব্লেসিং আর গন’।

উদাহরণ হিসাবে বলা এই নারীর গল্পটি হয়ত শুধুই গল্প। কিন্তু এমন ঘটনা যে জীবনের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে নেই, তাও কিন্তু নয়। পুরুষের জন্যে জন্যে এমন গল্প আছে, অনেক আছে। আছে বাড়িতে, আছে কর্মক্ষেত্রে, আছে সমাজে, এমনকি আছে বন্ধুদের আড্ডাতেও। মূল কথাটি হলো, কিছু মানুষের কাছে আপনার অভাবটি না ঘটলে তারা কখনও আপনার প্রয়োজনীয়তা বুঝবে না। বুঝবে মর্যাদাও।

এই যে আপনার অনুপস্থিতি তাদেরকে আপনার মূল্যটি অনুভূত করালো- এমন কেন হয়?

এর উত্তর আমি দিলে আপনি নেবেন না। আসুন এমন হওয়ার কারণটা ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবসের কাছ থেকে শুনি। টমাস হবস প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে বলেছেন। মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। আমাদের খুঁজতে থাকা কারণটি এখানে আত্মকেন্দ্রিকতা। কেননা আত্মকেন্দ্রিক মানুষের জগতটা নিজেকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। যদিও টমাস হবসের বক্তব্য অনুযায়ী সকলেই আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু মানবিক ও বিবেকবান মানুষ আত্মকেন্দ্রিকতাকে জয় করার চেষ্টা করেন বলে ঢালাও ভাবে আপনি সকলকে এই দোষে দুষ্ট বলতে পারবেন না।

তো আত্মকেন্দ্রিক মানুষ অন্যের কথা ভাবেন না। তিনি নিজেকে নিয়ে নিজের জগতেই নিমগ্ন থাকেন। তবে মনোবিজ্ঞান বলছে, তাকে মনে করিয়ে দিলে বা তাগাদা দিলে সে ঠিকই নিজের জগৎ থেকে, আত্মমগ্নতা থেকে বেরিয়ে আসবে।

এখন প্রশ্ন হলো, মনে করিয়ে দেওয়া বা তাগাদা দেওয়ার কাজটি কে করবে?

এ প্রশ্নের উত্তরটি খুবই সহজ- আপনি নিজেই করবেন। কে করবেন? করবেন এজন্যে যে, আপনি আপনার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যেও ঠিক তার নিজের কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing