মানুষে বিশ্বাস, বিশ্বাসের মানুষ

0 comment 20 views

কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিল, কাউকে বিশ্বাস করাটা কি বোকামি?

প্রশ্নটিতে ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে। আর আছে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ। কিন্তু তারপরও আমাদেরকে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। আমাদেরকে বারেবারে মানুষের কাছেই ফিরে যেতে হয়।

মানুষ কখনও নিজের শিল্পগুণ আছে কী নেই সেটি দেখে না। মানুষের প্রধানতম চালিকা শক্তি যে বিবেক, সেটাও অনেকে বোঝে না। তার বিবেক কাজ করছে কিনা সে খবরও রাখে না। তাহলে কি এরা জগত সংসার সম্পর্কে উদাসীন? না, তাও নয়। জগত সংসার সম্পর্কে উদাসীন হলে আমাদের সঙ্গে দেখা হতো না। নির্জন কোথাও বসে এক মনে ধ্যান করত। অথবা দার্শনিকের মতো ঘুরে বেড়াত। কিন্তু যাদের কথা বলছি তারা শুধুই বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে তার একলার জন্যে। স্বার্থ এদেরকে বেঁচে থাকবার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।

দেখলেন তো! উত্তরটি নিজে থেকেই এসে গেল। হ্যাঁ, মানুষকে বিশ্বাস করা বোকামি নয়- স্বার্থপর মানুষকে বিশ্বাস করাটা বোকামি।

জীবনের চলতি পথে আমাদেরকে তো মানুষে বিশ্বাস করতেই হয়। এই বিশ্বাস করাটা জরুরি। এই বিশ্বাসই তৈরি করে দেয় মানুষে মানুষে সম্পর্ক, বানিয়ে দেয় সহযোগিতার পরম আস্থা।

মতের মিল-অমিল তো থাকবেই, থাকবে মতাদর্শের পার্থক্য- তবেই তো হবে আলচনা-বিতর্ক। এটাই তো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। সেজন্যে চাই সততা। কেননা বুদ্ধিমত্তা জরুরি হলেও সততা না থাকলে তার কোনও মূল্য থাকে না। সততা মানুষকে অন্তরকে স্বার্থপর হতে বাধা দেয়।

বিশ্বাস কেবল কয়েকটি বর্ণের সমষ্টি নয়। বিশ্বাস হলো একটা মানবজীবনের সমর্পণ। ফলে কেউ যখন কারও বিশ্বাসের অমর্যাদা করল, সে কিন্তু মানুষটাকেই ধ্বংস করতে সচেষ্ট হলো আসলে।

বস্তুত বিশ্বাস এক জটিল সমীকরণ। শেষ করি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বলে বিবেচিত আব্রাহাম লিঙ্কনের কথা দিয়ে। আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন, যে কাউকে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক; কিন্তু সকলকে ‘অবিশ্বাস’ করা আরো অধিক বিপজ্জনক।

আব্রাহাম লিঙ্কন কি তবে কাউকে বিশাস করেন নি? আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে এই মানুষটিই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে বিশ্বাস করেছেন- আব্রাহাম লিঙ্কন পুরো আমেরিকার মানুষকে বিশ্বাস করেছিলেন। কেননা মানুষ যদি মানুষকে বিশ্বাস না করতে পারে তাহলে আমাদের সুন্দর এই পৃথিবীটা আর সুন্দর থাকবে না- কুৎসিত হয়ে যাবে।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing