চলার পথে নানান জনের সঙ্গে কিংবা ধরুন যে কোনো সম্পর্কে বিতণ্ডা বা কথা কাটাকাটি আর ঝগড়া হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এটি হয় দ্বিমত পোষণের কারণে। একারণেই গণতন্ত্রের প্রধান নিয়ামক বলা হয় পরমতসহিষ্ণুতাকে। অন্যের মতামতে যার শ্রদ্ধাবোধ নেই তিনি আর যা-ই হোন- গণতান্ত্রিক মানুষ নন। এই অগণতান্ত্রিক মানুষেরাই দ্বিমত পোষণের সময় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং অন্যজনিকে কটূক্তি বা অশ্রাব্য বাক্য ব্যবহার করেন। সোজা কথায় গালাগালি করেন।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গালাগালি বা একগুচ্ছ অশ্লীল শব্দ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিরই অংশ। আর সেগুলো মুখ দিয়ে উগরে দেওয়ার সাথে সাথেই প্রায় যাদুমন্ত্রের মতোই গালাগাল দেওয়া উত্তেজিত মানুষটি তাৎক্ষণিক একটা আরাম বোধ করেন।
ড. এমা বার্ন নামে এক বিশেষজ্ঞ ‘সোয়ারিং ইজ গুড ফর ইউ’ নামে একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নামটি বাংলা করলে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘গালাগাল দেয়া আপনার জন্য ভালো’। সে বইয়ে ড. বার্ন লিখেছেন, ‘গালি এমন এক ভাষা যা আপনি কিছু কিছু পরিস্থিতিতে কখনই ব্যবহার করবেন না।
আপনি-আমিও জানি সেটা। জানি বলেই গালাগালকে আমরা শিষ্টতা বহির্ভূত আচরণ ও ভাষা হিসেবে অভিহিত করি। গালাগাল যাকে করা হয় তিনি আঘাত পান এবং তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কটির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে। হয়ত কিছুদিনে তিনি সেসব গালাগাল ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক হয়েও যান। কিন্তু মনের কোনো এক গহীন কোণে কষ্টটা রয়েই যায়। আপনাকে যদি কেউ গালাগাল করে তাহলে আপনার ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটবে। আপনার মনেও দাগ রয়ে যাবে।
ফলে ড. এমা বার্নের ‘সোয়ারিং ইজ গুড ফর ইউ’ বই অনুসরণ করলে আপনি গুচ্ছ গুচ্ছ অশ্লীল শব্দ বলা মানুষ হিসেবেই পরিচিত হবেন এবং আর সকলে আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করবে। আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা কোনো কাজের কথা নয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ হলো শৃঙ্খলার প্রতিরূপ। নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তার সম্পূর্ণটাই আপনার হাতে।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি আপনার আপন সত্তাকে নিজের মতো চলতে দেবেন না কতগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ অশ্লীল শব্দের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন- এইটি সম্পূর্ণই আপনার ব্যাপার।
আর হ্যাঁ, আপনার স্বাধীনতাও বটে।
115
previous post