খোলা চিঠি

0 comment 118 views

প্রিয়তম মানুষ,

পৃথিবীতে আসবার পর থেকে আমি জীবিতই ছিলাম। কেবলই জীবিত ছিলাম। তখনও বাঁচতে শুরু করি নি। তখনও জানি নি, হদয় কেবলমাত্র শরীরের অংশ নয়। জানি নি, জীবিত থাকাটাই মুখ্য নয়। জানতেও পারি নি, বাঁচতে হলে তুমিটা লাগে।

এই জানাটা জানতে পেলাম আজ থেকে সাঁইত্রিশ বছর আগে- যেদিন তোমার সঙ্গে দেখা হলো। সেদিন থেকে আমার কি যেন হয়ে গেল। ওইদিন থেকে আমি আর জীবিত থাকায় সন্তুষ্ট থাকতে পারলাম না। ওদিন থেকে আমি বেঁচে থাকতে চাইতে লাগলাম। এই চাওয়া আমাকে জানালো, জন্ম থেকে আমার বুক গহীনে যে হৃদয়টা ধুকপুক ধুকপুক করছিল- সে হৃদয়টা শুধুই আমার শরীরের অংশ নয়। ওর আলাদা অস্তিত্ব রয়েছে। স্বাধীন সে। তার ইচ্ছা আছে, আকাঙ্ক্ষা আছো, সাধ আছে, আছে স্বপ্ন।

অথচ তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আছে জটিল এই বিষয়টি আমি জানতেই পারি নি! সেদিনই প্রথম জানতে পেলাম- যেদিন তোমার দেখা পেলাম! তবে কি জানো, আমার জন্যে তখনও আরও বিস্ময় বাকি ছিল! আমি দেখলাম যে হৃদয়টিকে এতদিন নিজের বলে ভেবে এসেছি, সে আমাকে খুব কঠিন স্বরে জানালো, সে নাকি আমার নয়! ঠিকানা নাকি তার তোমার বুকে! এই খবরটি জানিয়েই সে চলে গেল স্বঘোষিত ঠিকানায়! কেমন লাগে বলো তো?

এরপর থেকে আমি হৃদয় ছাড়া জীবিত থাকতে থাকলাম। এইভাবে জীবিত থেকে কি লাভ বলো? তাছাড়া আমাকে তো বাঁচতে হবে। এবং বাঁচতে গেলে তোমাকে লাগবে আমার। লাগবেই লাগবে। নইলে হবে না।

এরপর একদিন খুব সংকীর্ণ পায়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ফেরত চাইলাম আমার হৃদয়। তুমি বললা, এটা তো দেওয়া যাবে না!

শুনে আমার পাঁজরের হাড়গুলো কটকট শব্দে ভাঙবে বলে উদ্যত হলো। তখন তোমার মায়া হলো। তুমি বললা, ওইটা দিব না। ওই হৃদয়টা আমার কাছে থাক। তুমি বরং আমারটা নাও।
সেদিন থেকে আমরা দৃশ্যত আলাদা মানুষ হলেও বস্তুত একজন হয়ে গেলাম। সেদিন থেকে আমরা আমাদের হয়ে গেলাম। সেদিন থেকে আমাদের জীবন স্বপ্ন হয়ে গেল। সেদিন থেকে তুমি একলা শুধুই আমার হয়ে গেলে।

তারপর কিভাবে সাঁইত্রিশটি বছর পেরিয়ে গেল- টেরও পাই নি। টের পেতেও চাই না। শুধু চাই ঠিক এইভাবেই জীবনের বাকিটা সঙ্গে থেকো আমার। ভালোবাসি যে! তুমি ছাড়া আমার চলবে না তাই। একদম চলবে না।

ইতি
আমি।
২৪.৪.২০২৩

Leave a Comment

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing