একটা কথা আছে, কেউ তাকায়, কেউ দেখে। বিষয়টা হলো, তাকালেই দেখা হয় না। দেখাটা ভিন্ন জিনিস। তাকানোর কাজটা করে চোখ, আর দেখবার কাজটা করে মন। মন একটা বায়বীয় পদার্থ। আমাদের স্বাধীনতার মতো। ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলে ব্যাখ্যাও করা যাবে না যেমন, তেমনই।
আচ্ছা, আপনি যেখানেই দৃষ্টি ফেলেন তার সবটা কি দেখেন আসলে? দেখেন না কিন্তু। দেখেন যে না তার প্রধান প্রমাণটি হলো আপনার ছবি। যে কোনো একটি ছবি হাতে নিয়ে তাকালেই দেখবেন, ছবিতে যা কিছু দেখা যাচ্ছে, ছবিটি তোলার সময় আপনি সেসব লক্ষ্যই করেন নি, মানে দেখেন নি। অথচ ছবিটি তোলার সময় চারপাশে ঠিকই তাকিয়ে ছিলেন।
দেখুন এখানে আরেকটা বিষয় চলে এল- লক্ষ্য। মানে তাকালেই কেবল চলবে না। তাকিয়ে দেখলেও চলবে না। লক্ষ্য করে দেখতে হবে। এইটি মনোযোগ। তাকিয়ে দেখার সামগ্রিক বিষয়টিই আসলে মনোযোগ। দেখায় মনোযোগ না থাকলে অনেক কিছুই দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাবে। শ্রবণের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। এই কারণেই হয়ত ‘দেখাশোনা’ শব্দবন্ধের উৎপত্তি ও গুরুত্ব। তবে দুয়ের সঙ্গেই ও বায়বীয় মনের খুব যোগাযোগ।
মন হলো অনুভূতির কেন্দ্র। ওর ভেতরে বাস করে ছয়টি রিপু। কিন্তু নাই কোথায় বাস করে? বুকের গহীনে না শীর্ষ মগজে? অনুভূতি বলছে বুকের গহীনে তার বসবাস আর যুক্তি ও বিজ্ঞাপন বলে- মগজ। অথবা হয়ত সে দোর্দণ্ডপ্রতাপে দু জায়গাতেই নিজের রাজত্ব খুলে বসেছে! কে জানে! বিজ্ঞাপন জানাচ্ছে মানুষেরা স্মৃতি জমা হয় মগজে। ধরুন আপনাকে কেউ অপমান করল। আপনি কি সেটা ভুলে যাবেন? না, ভুলে যাবেন না। ভুলে যেতে চাইলেও পারবেন না। আপনার স্মৃতিতে আপনাকে অপমান করা মানুষটির সঙ্গে অপমানটুকুও ঠিকই সংরক্ষিত হয়ে থাকবে। থাকে আমারও। কিন্তু আমি সেটা বুঝতে দেই না কাউকে। ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই। জমিয়ে রাখি ভালোবাসা। জমা থাকে কৃতজ্ঞতা বোধ। জমা আছেন আপনি, আপনারাই।