আজকে আমার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান সালমানের কলেজ জীবনের প্রথমদিন। তার জীবনের বড় বড় পদক্ষেপের এটি আরেকটি নতুন সূচনা। তবে আজকের দিনটি শুধু সালমানের জীবনের স্মরণীয় দিন নয়। একজন বাবা হিসেবে আমার, মা হিসেবে আমার স্ত্রীর, বোন হিসেবে আমার কন্যাদের- মানে আমাদের পরিবারের সকলের জীবনেই আজকের দিনটি স্মরণীয়। আমার যে কি আনন্দ! কি আনন্দ!
এই আনন্দ আজকের নয়। সেই সেদিন থেকেই যেদিন সালমান পৃথিবীতে এল। আমাদের জীবনে বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সন্তানের পৃথিবীতে আসার ঘটনাটি সেসব অদ্ভুত সব ঘটনার অন্যতম। আমার আরও কন্যা আছে। তাদের বেলাতেও এই অদ্ভুত অনুভূতিটি হয়েছিল।
সালমানের জন্ম মুহূর্তে আমি খুব চিন্তিত ছিলাম স্ত্রী রেখাকে নিয়ে। কিন্তু তবুও সালমানের আগমনের আবেশটি আমাকে অদ্ভুত ভাবেই জড়িয়ে ছিল। পাখির মতো ছোট্ট তুলতুলে একটি মানব শিশু! কেমন হাত নাড়ছে, পা নাড়ছে, সুতীব্র চিৎকারে সকলকে নিজের আগমনের সংবাদটি পৃথিবীকে জানাচ্ছে! আর এই মানব শিশুটি আমার। একান্তই আমার। সন্তান আমার। আমিই ওর বাবা। আমি আজান দিলাম। আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রু পড়তে লাগল। আনন্দাশ্রু। তখন সবাই আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়েছিল। তাদের দুচোখ ভরা ছিল বিস্ময়। আজান শেষে সালমানকে আমার কোলে তুলে দেওয়া হলো। ঠিক ওই মুহূর্তে আমার পৃথিবীটা দুভাগ হয়ে গেল। একভাগে পুরো পৃথিবী, অন্যভাগে আমার সালমান। আমার সৌভাগ্যের আরেকটি প্রতীক।
সালমান একটু একটু করে বড় হতে লাগল। হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে লাগল। আধো আধো বোলে কথা লাগল। ওই আধো আধো বোলে প্রথম যেদিন আমাকে বাবা বলে ডাকল, আমি সেদিন পৃথিবীর সুখি মানুষদের একজন। কিছুদিন পর স্কুলে যেতে শুরু করল সালমান। স্কুলে যেতে আসতে কখন যে এতটা বড় হয়ে গেল, আমি রোজ রোজ দেখেও বুঝতেই পারলাম না!
স্কুল জীবন পেরিয়ে আজকে সালমানের কলেজ জীবনের প্রথমদিন! ওর জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হলো আজ। এটা শোনার পর ওর জন্ম হওয়ার দিনটি থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমি যেন ঠিক চলচ্চিত্রের মতো পুরোটা দেখতে পেলাম। সেই প্রথমদিনের মতো আজও আমার চোখ দুটো ভিজে গেল। আমি আমার সমস্ত চাওয়া নিয়ে ফিসফিস করে বললাম, সত্যিকারের মানুষের মতো মানুষ হও বাবা- যে মানুষ সংবেদনশীল।