সন্তানের সফলতা বাবামায়েরও সাফল্য

0 comment 83 views

জীবন মানুষ এবং মানুষের মধ্যে একটি দীর্ঘ ভ্রমণ। আসুন দূরত্বটি কাটাতে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি পদক্ষেপ নেওয়া যাক।
সার কথাটা হলো, সন্তানের সফলতার মধ্যেই বাবা মায়ের সাফল্য।
টাকাপয়সা, যশ আর নামের খ্যাতিকেই আমরা অনেকে জীবনের সফলতা ভাবি। হ্যাঁ, জীবনে এগুলোর প্রয়োজন আছে বটে কিন্তু এসব থাকার পরেও যে মানুষটির ভেতরে মূল্যবোধ নেই তাকে আমরা মানুষ বলে মনে করতে পারি না। একটা উদাহরণ দিই।
বাংলাদেশের মানুষ সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণ বলে গণ্য করেন। যেনতেনভাবে একটা সরকারি চাকরি তাদের বড়ই আরাধ্য। যে কোনো চাকরির ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো প্রথম শর্ত। গেল মার্চ মাসে অসামাজিক কার্যকলাপ ও ঘুষ নেওয়ারর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক সহকারী পুলিশ সুপারের চাকরি চলে গেছে। সহকারী পুলিশ সুপার তো অনেক পদ। বাংলাদেশের সবখানেই এই রকমের উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যায়। কিন্তু সব দুর্নীতিগ্রস্তেরই শাস্তির আওতায় আসেন তা কিন্তু নয়। সবাইকে যদি শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করা হয় তাহলে ঠগ বাছতে গাঁ উজার অবস্থা দাঁড়াবে।
ক’দিন আগে একজন প্রশ্ন তুলেছিল, বাংলাদেশের কোন্‌ কোন্‌ সরকারি অফিসে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের স্বর্গরাজ্য কায়েম হয়েছে?
অপরজন তাকে শুধরে দিয়ে বলেছিল, প্রশ্নটা হবে কোন্‌ কোন্‌ সরকারি অফিসে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের স্বর্গরাজ্য কায়েম নেই। বাকিটা খুজে বের করুন।
এখন দেখুন ওই পুলিশ সুপারের টাকাপয়সা, যশ আর নামের খ্যাতি- সবই তো ছিল। ছিল না কেবল মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধের অভাবেই তিনি অসৎ পথে উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়েছেন। যদিও এই আমেরিকায় দুর্নীতি ও অসততা এভাবে ডালপালা ছড়িয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেই।

ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার কাজটি শুধু স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় একা করে না। কেননা শিক্ষাটা লেখাপড়ার মতো শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে না। শিশুর শিক্ষিত হওয়ার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হলো তার নিজেরই ঘর। আর শিশুর প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা। প্রথম সহকারী শিক্ষক হলেন তার বাবা। এরপর আসে সমাজ। শিশু যে সমাজে বেড়ে উঠছে সে সমাজ হলো তার দ্বিতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সমাজের মানুষেরা তার প্রতিবেশী বন্ধু ও স্বজন। এই প্রতিবেশী বন্ধু ও স্বজনরা কাকে ভালো বলছে, কাকে খারাপ বলছে, কি গ্রহণ করছে, কি বর্জন করছে- সেসব দেখে দেখে আপনার শিশুটিও শিখবে। এই কারণেই সামাজিক ব্যবস্থাটা গুরুত্বপূর্ণ।

এবং সবশেষে আসে স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেই আপনার ঘর থেকে শেখানো মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে আপনার আমাদের সন্তানটি কতটা লেখাপড়া শিখবে এবং সেটিকে কিভাবে কাজে লাগাবে। তাদেরকে মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। সাধনা করতে শেখাতে হবে। তাদের ভেতরে উচ্চাকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে হবে। এই কাজটি করতে হবে মা-বাবাকে। বাবা-মা যখন এই কাজটি সফলভাবে করেন তখনই সাফল্য সন্তানের হাতে এসে ধরা দেয়। বাবা-মা তখন সন্তানের ওই সাফল্যকে নিজেরই সফলতা বলে মনে করেন। এবং বাবা-মায়ের এই মনে করায় বিন্দুমাত্র বাহুল্য নেই। যা আছে- তার নাম অহংকার। সন্তানকে নিয়ে অহংকার। এই অহংকার অনেক দামি। সকলে এর নাগাল পান না আসলে।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing