মূল্যায়ন

0 comment 112 views

শ’ খানেক বছর আগে ডেল কার্নেগি নামে একজন মানুষ ছিলেন। ভদ্রলোকের পুরো নাম ডেল ব্রেকেনরিজ কার্নেগি। লোকটা আমেরিকান লেখক। আত্মোন্নয়ন নিয়ে তার কিছু বই আছে। বইয়ের বিষয়- “হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপলস”। এই বই এখন বিক্রির তালিকায় সেরা হয়ে আছে। মোটামুটি পৃথিবীর সকল ভাষাতে অনুবাদও হয়েছে।

লোকেরা ভেবে নিয়েছে ডেল কার্নেগি তার বইয়ে সফল হওয়ার মন্ত্র লিখে দিয়েছেন। আসলেই কি তাই? সফল হওয়ার কোনো মন্ত্র কি আছে কিংবা হয় আসলে? অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস কিংবা মাইক্রোসফটের যিনি গড়লেন- সেই বিল গেটসের কথাই ধরুন। তারা কি ডেল কার্নেগি প্রচারিত সফল হওয়ার মন্ত্র অনুসরণ করে আপন অবস্থানে পৌঁছেছেন? না মনে হয়। আপনার কি ধারণা?

তবে যেটি হয় আরকি, ডেল কার্নেগি মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন। এবং এই কারণেই তার বই মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। এবং একই কারণে সেসব মিলিয়ন মিলিয়ন পাঠকদের মধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন সফলতা অর্জন করেছেন- এটা আপনি বলতে পারবেন না। এটাকে একটা ট্র্যাজেডি বলা যেতে পারে। আসলে বিষয়টা হলো, জীবনে সকলেই বড় হতে চান। আমিও মনে করি, বড় হওয়া খুব দরকার। জীবন একটাই। জীবনের সর্বোত্তম ব্যবহার করা দরকার। যিনি এইটি করতে পারেন আসলে তিনিই সফল, তিনিই বড়। তার অর্জনই সেরা। এখানে অর্জনটা গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্জনটা কেবলই অর্থনৈতিক যে নয়- সেটাকে মনে রাখতে হবে।

সফল হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাটি সবার আগে আসে। প্রথম কাজটিই হলো নিজের গুরুত্বটিকে বুঝতে পারা। কিন্তু নিজেকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আপনি যদি অন্যকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করে দেন, তাহলে আপনার সফলতার আকাংক্ষাটি শুরুতেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যাবে। সবসময় অন্যকে ছোট করে আপনি কখনই বড় হতে পারেন না। কক্ষনও নয়। কেননা আপনি যদি নিজেকে বড় ভেবেই থাকেন- তার স্বীকৃতিটুকু কিন্তু অন্যেরাই দেবে। যদি সেটি না ঘটে তাহলে আপনি যত বড় মিলিয়নিয়ারই হোন না কেন- আপনি বড় নন, আপনি বড় হতে পারেন নি। আপনার ভেতরে ঘাটতি রয়েছে।

মিলিয়নিয়ার শব্দটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করা হলো। এই উদ্দেশ্যের অর্থ হলো আপনার অর্থনৈতিক অর্জন যে আসলে কোনো অর্থ বহন করে না- সেটাকে উপস্থাপন করা। ভুলে গেলে চলবে না, স্রষ্টা সুন্দর। সকল সুন্দরও তাঁরই সৃষ্টি। সেকারণে কেউই অসুন্দর নন। অযোগ্যও নন কেউ। কিন্তু কথা থাকে। পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয় তার তার নিজের কাজ দিয়ে। মানুষের কাজই তার জীবনে গৌরব এনে দেয়, এনে দেয় মর্যাদা। এবং কাজ দিয়েই মানুষ জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

কাউকে ছোট করে, কাউকে ছোট ভেবে কখনও কিছু অর্জন করা যায় না। এতে যা হয় তার নাম পরিচয় অহমিকা বা অহংকার। ছেলেবেলাতেই আমরা পড়েছি, অহংকার পতনের মূল। এই পতন থেকে বাঁচতে হলে একটাই করণীয় আছে- মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। কাউকে ছোট ভাবা যাবে না। তা তিনি যে অবস্থানেই থাকুন না কেন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কথা একবার ভাবুন তো- একজন মানুষ মানে একটিই ভোট। অমুকে ধনী বলে তিনি পাঁচ-দশটি ভোট দিতে পারেন আর আপনি দরিদ্র বলে একটি ভোট দিতে পারবেন। এমন তো নয়, তাই না?

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing