শেখ সাদির পোশাকের গুণে গল্পটার কথা আপনাদের মনে আছে?
শেখ সাদি একবার এক ছেঁড়া-নোংরা পোশাক পরে নিমন্ত্রণে চলে গেলেন। অমন পোশাকে তাকে কেউ চিনতেও পারল না। ভাবল ভিখিরি এসেছে বুঝি। বাড়ির মালিক শেখ সাদিকে খুব তাচ্ছিল্য করল, যেমন তেমন খাবার দিল। শেখ সাদি বিষয়টা বুঝতে পারলেন। এরপর তিনি দামি আর ঝলমলে পোশাক পরে ও বাড়িতে আবার গেলেন। এবারে তাঁকে দারুণ সন্মান দেখিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো, দারুণ দারুণ সব উন্নত খাবার পরিবেশন করা হলো। শেখ সাদি সেসব খাবার নিজে না খেয়ে জামার পকেটে ঢোকাতে লাগলেন।
বাড়ির মালিক অতিথির কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে বলে, জনাব এটা আপনি কি করছেন?
শেখ সাদি বললেন, জনাব, আপনি তো আমাকে সন্মান বা আতিথেয়তা করছেন, করছেন আমার পোশাককে।
এরপর নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। শুনে বাড়ির মালিক খুব লজ্জা পেয়ে গেলেন।
পারস্যের কবি শেখ সাদি মধ্যযুগে পোশাকের গুণের কথা গল্পের মাধ্যমে শুনিয়েছিলেন কেননা মানুষের যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করে পোশাককেই মর্যাদা দেয় বলে। এটি ছিল পোশাকি সমাজের শেখ সাদির তীব্র প্রতিবাদ।
তবে পোশাক শুধুই মর্যাদার প্রতীক নয় কিন্তু। পোশাক মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাছাড়া সামাজিক রীতিনীতি ও চর্চার প্রতিফলনও পোশাক। আবার পোশাক কখনও কখনও মানুষের রুচির পরিচয়, মর্যাদার সঙ্গে ক্ষমতা এমনকি লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজনকেওতুলে ধরে।
কিন্তু পোশাক তো বাহ্যিক আবরণ। ফলে ব্যক্তি যতই ঝকঝকে ঝলমলে চোখ ধাঁধানো পোশাক পরুক না কেন তার ভেতরটা যদি ঝকঝকে ঝলমলে না হয় তবে তার পরিধেয় পোশাকই তার বিরুদ্ধাচারণ করে। মনে রাখতে হবে মানুষের বেশভূষা যতই মূল্যবান হোক তার মূল্যটা কিন্তু ব্যক্তির ওপরেই নির্ভর করে, পোশাকের ওপর নয়। কেননা বেশভূষা, পোশাকে যতই সমিল থাকুক- প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র ও আলাদা। একইভাবে প্রতিটি মানুষই চরিত্রগত দিক থেকেও ভিন্ন ভিন্ন বটে। এটি বৈশিষ্ট মানুষের জন্মগত। ফলে আপনার উন্নত বেশভূষা বস্তুত কোনো অর্থ বহন করে না যদি গুণগত মানের দিক থেকে আপনি উন্নত না হন।