এই পৃথিবীকে প্রায়ই আমরা সুযোগ আর প্রতিযোগিতার মঞ্চ বলি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, পৃথিবী যেন আসলে এক বিশাল যাদুর বাজার—যেখানে সবকিছুরই এক অদৃশ্য মূল্য নির্ধারিত আছে। এখানে যার হাতে যত বেশি সামর্থ্য, সে তত বেশি পণ্য কিনতে পারে। আর সেই পণ্য সবসময় বস্তুগত জিনিস নয়—কখনো তা সম্মান, কখনো ন্যায়বিচার, আবার কখনো চরিত্র।
এই বাজারে টাকার কাছে বিক্রি হয় সম্মান।
যার কাছে অর্থ আছে, তাকে সমাজ প্রায়শই মর্যাদার আসনে বসায়। মানুষ তাকে সম্মান করে, তার পাশে দাঁড়ায়, এমনকি তার ভুলও অনেক সময় ক্ষমা করে দেয়। অথচ যিনি সৎ ও নীতিবান কিন্তু অর্থে অক্ষম, তিনি সমাজের চোখে অবহেলার শিকার হন।
এই বাজারে ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয় আইন।
ক্ষমতার কাছে সত্য ও ন্যায়বিচার প্রায়ই নতি স্বীকার করে। আইনের ভাষা তখন বদলে যায়, বিচার ব্যবস্থার পাল্লা অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ে। একসময় যে ন্যায় মানুষকে রক্ষা করার কথা ছিল, সেটাই ক্ষমতাবানদের ছায়ায় বিক্রি হয়ে যায়।
এই বাজারে অভাবের কাছে বিক্রি হয় চরিত্র।
ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অভাব একজন মানুষকে এমন জায়গায় ঠেলে দেয় যেখানে সে নিজের আদর্শকেও বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। অনেক সময় সততার মুল্য হারিয়ে যায় টিকে থাকার লড়াইয়ে।
তবুও, এই বাজারে কেবল ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়মেই সবকিছু ঘটে না।
যারা একটু কৌশল জানে, যারা একটু দামাদামি করতে পারে, তারা অনেক সময় সামর্থ্যের সীমা ছাড়িয়ে কিছু অর্জন করে ফেলে। মনের জোর, ধৈর্য আর প্রজ্ঞা অনেক সময় অর্থ, ক্ষমতা ও অভাবের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
তাহলে কি পৃথিবী কেবলই এক নির্মম বাজার?
না, একে শুধু বাজার বললে ভুল হবে। এটা একসঙ্গে যাদুর মতো, কারণ এখানে সবকিছুর দাম আছে বটে, কিন্তু সেই দাম কেবল অর্থ দিয়ে চোকানো যায় না। কিছু দাম আছে ত্যাগ দিয়ে, কিছু দাম আছে ধৈর্য দিয়ে, আর কিছু দাম আছে ভালোবাসা ও মানবিকতা দিয়ে।
অতএব, এই যাদুর বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের শিখতে হবে—
অর্থ, ক্ষমতা আর অভাবের সীমাবদ্ধতাকে বুঝতে এবং তার বাইরেও নিজের মানবিকতা অটুট রাখতে।
কারণ সবকিছু পাওয়া গেলেও, যদি আত্মা বিক্রি হয়ে যায়—তাহলে জীবনের প্রকৃত মূল্যটাই হারিয়ে যায়।
