আজ ২৯ নভেম্বর প্রয়াণ দিবসে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভালো থাকুন বাংলাদেশের পরম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন।
সারা বিশ্বের কাছে তার পরিচয় বিখ্যাত রক ব্যান্ড বিটলসের লিড গিটারিস্ট। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি কেবলই তাই নন। তিনি বাঙালির কাছে সমাদৃত দুঃসময়ের একজন অকৃত্রিম বন্ধু বলেই। একাত্তরের সেই উত্তাল সময়ে পণ্ডিত রবি শংকরের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জর্জ হ্যারিসন দাঁড়ালেন বাংলাদেশের পাশে, দেশটির অসহায় মানুষের পাশে।
তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু, আমাদের বন্ধু জর্জ হ্যারিসন। একাত্তরে তার কণ্ঠে ‘বাংলাদেশ’ গানটি আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বে জুড়ে। সেই গান দারুণ ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরিতে।
আজ কিংবদন্তী এই কণ্ঠশিল্পীর প্রয়াণ দিবস।
৬০-এর দশকে তরুণদের মাঝে দুনিয়াজোড়া যে বিদ্রোহ ও নানা অস্থিরতার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদী বহ্ণিশিখা জ্বলে উঠেছিল, গানের ব্যান্ড দল বিটলস ছিল তারই প্রতিচ্ছবি। বিটলস তার সংগীত দিয়ে পুরো একটা প্রজন্মকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল তারা।
মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ওপর পাকিস্তানের নির্মম অত্যাচার বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে, শরণার্থীদের জন্য অর্থ যোগান দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজিত হয় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।’
বাংলার আরেক বন্ধুবর রবি শঙ্করের সাথে একাত্ম হয়ে সেই কনসার্টের অন্যতম আয়োজক হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন জর্জ হ্যারিসন। সেই কনসার্টের শেষ দিকে হ্যারিসন ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামের সেই বিখ্যাত গানটি গেয়েছিলেন তিনি। করুণ আর্তনাদের সুরে তিনি বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা।
২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন এই মহান শিল্পী।
কেবল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই নয়, বিশ্বের যে কোনো জাতির-দেশের দুঃসময়ে নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন।
চোখের দেখায় তিনি নেই। দেখাও যাবে না আর কোনোদিন। কিন্তু মানবতার শিল্পী জর্জ হ্যারিসন চিরঅম্লান থাকবেন বাঙালির অন্তরে, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণায়। তার প্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।