নাম ছিল শহরের—জলবর্ণ। দূর থেকে দেখে মনে হতো, যেন সব কিছু ঝকঝকে, রঙিন, আর নিখুঁত। লোকেরা হাসত খুব, কাঁদতও ঠিক সময়ে—তবে সবটাই যেন কোনো অদৃশ্য নির্দেশ মেনে চলা নাটকের অংশ।
এই শহরে এসে নতুন ভাড়াটে হয়ে উঠলেন একজন—নীলয়। পোশাকে-চলনে সাধারণ, চোখে-মুখে সাদামাটা ক্লান্তি, কিন্তু চোখদুটি যেন খুঁজছে কিছু—একটি মানুষ, একটি সত্য।
শুরুতে নীলয়ও এই শহরের বাকিদের মতোই ভাবতেন—সবাই ভদ্র, সুশীল, আধুনিক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝলেন, এখানে কথা মানেই প্রতিচ্ছবি, এখানে প্রতিশ্রুতি মানে মুহূর্তকালীন বিনিময়, আর বন্ধুত্ব—সোশ্যাল মিডিয়ার এক “রিঅ্যাকশন” মাত্র।
একদিন, এক ঘূর্ণিঝড়ে গোটা শহর বিদ্যুৎহীন হয়ে গেল। মানুষ তখন আর মেকআপে-ফিল্টারে নিজেদের সাজাতে পারছিল না। সেই রাতে নীলয় প্রথম দেখলেন রেখাকে—এক কফি দোকানে, আলোর অভাবে মোমবাতি জ্বালিয়ে একাকী বসে থাকা এক নারী। তিনি কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন না, কারো মন জয় করাও তার উদ্দেশ্য ছিল না—তিনি কেবল ছিলেন, তাঁর নিজের মতো করে।
নীলয় ধীরে ধীরে বুঝলেন, রেখার হাসি ছিল অপ্রস্তুত, চোখ ছিল কথাবিহীন, আর বিশ্বাস—তা ছিল বলার জন্য নয়, বোঝার জন্য।
তারা কথা বলত খুব সামান্য, কিন্তু প্রতি সন্ধ্যায় দেখা করত। সময় যত গেল, নকল শহরের সব আলোকসজ্জার মধ্যে তারা একে অপরের মধ্যে খুঁজে পেল অন্ধকারেও জ্বলতে থাকা ছোট্ট নিঃশব্দ এক আলো।
একদিন নীলয় বলেছিল,
“তুমি জানো? এই শহরে আমি অনেক মুখ দেখেছি, কিন্তু মানুষ তুমি প্রথম।”
রেখা শুধু মৃদু হেসেছিলেন। জবাবে কিছু বলেননি। কারণ তিনিও জানতেন—সত্যিকারের সম্পর্ক কখনো চিৎকার করে না, শুধু নিঃশব্দে পাশে থাকে।
⸻
নকলের ভিড়ে তারা একে অপরকে পেয়েছিল—এটাই তাদের ভাগ্য, আর এটাই ছিল তাদের সত্য।
ভালো থাকবেন🤗ভালোবাসবেন।