‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ নামে রবীন্দ্রনাথের একটা নাটক আছে। না, রবীন্দ্রনাথের নাটক নিয়ে আলোচনায় আমি যাব না। সেটি আমার দায়ও নয়, কর্মও নয়। কথা হলো, খ্যাতিমান লোকেদের সুবিধে যেমন থাকে, তেমনি থাকে অসুবিধেও। আর এই দুইয়ের সঙ্গেই কেমন করে যেন জড়িয়ে যায় বিড়ম্বনাও। খ্যাতিটা অনেকে উপভোগ করেন বটে। কিন্তু অসুবিধে চান না তারা। নিতে রাজি নন বিড়ম্বনাও।
খ্যাতিরও আবার রকমফের আছে। সুখ্যাতি আর কুখ্যাতি। সুখ্যাতি লোভাতুর। কিন্তু কুখ্যাতি? মজার ব্যাপার হলো কুখ্যাতিও বহু বহু লোকের কাছে কাঙ্ক্ষিত। আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, পাড়ার মাস্তান থেকে গুণ্ডা,বদমাশ অবধি সকলেই কুখ্যাত হতে চায়। ওই তার পুঁজি। তাহলেই লোকে তাকে ভয় করবে। আবার এরাই নাকি দেশের রাজনীতির অঙ্গন দাপিয়ে বেড়ায়। সে অঙ্গনে আবার তার চাই সুখ্যাতি। হয় জনপ্রতিনিধি। দাবি তোলে ফুলের সঙ্গে তার কোনো ভেদাভেদ নেই।
কিন্তু কোনো আমার খ্যাতি নেই। খ্যাতি হতে হলে যতটা অসাধারণ হতে হয়- আমি তার ধারেকাছেও নই। চারপাশের আর দশটা মানুষের থেকে আলাদা কেউ নই আমি। তবু কেউ কেউ আমাকে খ্যাত-প্রখ্যাত বলে নির্দেশ করতে চান। অনেকে তো করেও ফেলেন। তাঁদের বিভ্রান্ত দূর করতে বিনয়ের সঙ্গে বলে দিই আমি বিখ্যাত-প্রখ্যাত নই। আর ‘খ্যাতি’ নামক দ্রব্যটিও আমার জন্যে লোভনীয় কিছু নয়। আমি খ্যাতি উপভোগ করি না। দশজনের থেকে আলাদা হওয়াটা আমাকে আনন্দ দেয় না। মিশে থাকতে পারাটাই আমার জন্যে আনন্দদায়ক। ব্যক্তি আমি শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিত্ব আর পেশা দিয়েই সকলের চেয়ে আলাদা। এর বেশি কিছু নয়। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ আমার কর্মকে পছন্দ করে, ভালোবাসে- এইটাই জীবনের কাছে আমার অনেক বড় প্রাপ্তি।
জীবনে অনেক মানুষের ভালোবাসা, সমর্থন ও প্রশংসা পেয়েছি। মানুষ আমাকে একজন মানুষ হিসেবে সম্মান করছেন- এই অনেক বড় পাওয়া। আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটি হলো ভালোবাসা। মানুষের ভালোবাসা। খ্যাতি চাই না তাই, ভালোবাসাটাই কাম্য।