একাত্তরের ছায়া আজও তাড়া করে: চট্টগ্রামের ঘটনায় নারী ও ইতিহাসের অপমান

“ইতিহাস কাঁদে যখন উত্তরসূরি একই অপরাধে পা বাড়ায়…”

0 comments 52 views 4 minutes read

এই একটি বাক্যই বোধহয় যথেষ্ট আজকের চট্টগ্রামের ঘটনাকে বর্ণনা করতে।
একজন নারী শিক্ষার্থী—একটি পাবলিক ক্যাম্পাসে—দিনদুপুরে লাঞ্ছিত হন, শারীরিক আক্রমণের শিকার হন।
এই দৃশ্য শুধুই একটি ঘটনার খবর নয়, এটি একটি ভাবনার ব্যর্থতা, একটি ইতিহাসবিরোধী চেতনার নগ্ন প্রকাশ।

নারী: একাত্তরের প্রতীক, আজকের ভয়

একাত্তরে নারী ছিলেন ধর্ষণের শিকার, কিন্তু তার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিলেন প্রতিরোধের প্রতীক।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারী মানেই লড়াই, আত্মত্যাগ, এবং অসম সাহস।
আর আজ—একাত্তরের ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে—একটি স্বাধীন দেশের শিক্ষাঙ্গনে একজন নারীকে প্রকাশ্যে লাথি মারা হয়, অপমান করা হয় শুধুমাত্র মতভেদ বা ভিন্ন রাজনীতির জন্য।

প্রশ্ন জাগে—
এই কি সেই বাংলাদেশ যার জন্য লাখো প্রাণ গিয়েছিল?
এই কি সেই মুক্তচিন্তার জায়গা যেখানে নারী সমান মর্যাদায় এগিয়ে যাবে বলে ভেবেছিলাম?

যারা ইতিহাস বিকৃত করে, তারা ভবিষ্যৎও ধ্বংস করে

এই ঘটনাকে কেউ কেউ বলবেন “বিচ্ছিন্ন ঘটনা”।
কিন্তু ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে—প্রতিটি ভয়ঙ্কর বাস্তবতা একদিন এমনই ছোট একটি ঘটনার হাত ধরে শুরু হয়।
যখন নারীকে অপমান করার পরও আমরা চুপ থাকি, তখন আমরা আসলে ৭১-এর আত্মত্যাগকে অসম্মান করি।

এটা কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়—
এটা একটা রাজনৈতিক মনোভাব,
যা নারীর শক্তিকে ভয় পায়, নারীর কণ্ঠকে বন্ধ করতে চায়,
আর নারীর বিরুদ্ধাচরণকে শাসনের অন্যতম হাতিয়ার বানায়।

নতুন পোশাক, পুরোনো চেতনা

আজ যারা এই অপমান করছে, তারা বাহ্যিকভাবে হয়তো নতুন।
কিন্তু তাদের ভেতরে রয়ে গেছে সেই পুরোনো শিবিরী মনোভাব—
যারা একদিন একাত্তরে নারী ধর্ষণকে ‘যুদ্ধের কৌশল’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
আজও তারা নারীকে দেখে দুর্বলতা হিসেবে, ভয় নয়, সহানুভূতি নয়—
তাদের চোখে নারী মানেই ‘শত্রুর’ অস্ত্র ভাঙার জায়গা।

এই প্রজন্মের কিছু অংশ যেন তাদের পূর্বসূরির মতই ঘৃণার রাজনীতি শিখে বেড়ে উঠছে।

প্রতিবাদের ভাষা হারালে, ইতিহাস মুখ ফিরিয়ে নেয়

এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিরবতা আর নিরপেক্ষতা কোনো বিকল্প নয়।
যদি আমরা চুপ থাকি, তাহলে সেই চুপচাপ শব্দহীনতাই একদিন আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেবে।
আজকের এই আঘাত যে কারও বোনের, মায়ের, বন্ধুর গায়ে হতে পারত।

তাই প্রতিবাদ কেবল ন্যায়ের জন্য নয়—
প্রতিবাদ আজ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার ভাষা।

উপসংহার: একাত্তর শুধু অতীত নয়, প্রতিদিনের দিশা

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে নারীর চিৎকার, শহীদের রক্ত, আর স্বপ্নভাঙা মানুষের কান্না দিয়ে।
এই দেশ মাথা নত করার জন্য নয়।
এই দেশ সেই নারীর—যিনি অস্ত্র হাতে নয়, আত্মত্যাগ দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন।

চট্টগ্রামের শিক্ষাঙ্গনের এই ঘটনা আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরল পুরোনো সেই প্রশ্ন—
আমরা কি সত্যিই একাত্তরের বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি?

যদি এখনো নারীর গায়ে লাথি ওঠে, যদি এখনো ঘৃণার বীজ পুষে রাখা হয়—
তাহলে উত্তর হয়তো এখনো “না”।

ভালো থাকবেনভালোবাসবেন।
(আর ভুলকে চুপ করে নয়, চোখে চোখ রেখে দেখবেন।)

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing