আজকাল অনেকেই আমাকে বলছেন আমি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আমি কেন কিছু লিখছি না। তাদেরকে বলি, আমি এমন কেউ নই যে আমাকে সব বিষয়ে বলতেই হবে। বলা উচিতও নয়। কেননা যিনি সবই জানেন তিনি আসলে কিছুই জানেন না।
আরেকটি বিষয় হলো, ধর্মীয় কোনো বিষয় নিয়ে বলতে যাওয়াটা বোকামি। আপনি যদি ধার্মিক হন তাহলে ধর্ম যা বলে দিয়েছে আপনাকে সেটাই মানতে হবে। কিন্তু ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত মোটেই ক্রুসেড-জেহাদ কিংবা ধর্মের কোনো সংঘাত নয়। এর পুরো সমস্যাটি শুরুতে ছিল ভূমি দখল। এখন হয়েছে রাজনৈতিক।
আমাদের নিউ ইয়র্কে কিছু সুশীল আছেন। নিজেদের এরা মানবতাবাদী বলে দাবি করেন। এরা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির কিংবা দেবী মূর্তি ভাঙা প্রচার করেন কিন্তু ভারতে মুসলমান নির্যাতনের শিকার হলে তা নিয়ে কিছু বলেন না। চুপ করে থাকেন। এখন যেমন ফিলিস্তিন নিয়ে চুপ করে আছেন।
এদের মতো কিছু মুসলমানও আছেন। এরা ভারতে মুসলমান আক্রান্ত হলে বিপুল বিক্রমে পারলে তেড়ে ভারত চলে যান, কিন্তু বাংলাদেশে যখন হিন্দু মার খায়, এরা তখন উদাস হয়ে আকাশ দেখেন। হামাস যখন ইসরাইলিয়ের মানুষদের ওপর হামলা চালাল, এরা তখন আকাশে রামধনু খুঁজছিলেন।
আপনি যদি মানবিক মানুষ হন তাহলে মানুষের ধর্মীয় পরিচয় আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যে কোনো মানুষ নির্যাতনের শিকার হলেও প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠার কথা। যদি সেটি না করেন তাহলে আপনি সুশীল সমাজের কোনো প্রতিনিধি নন। আপনি একজন ভণ্ড এবং শুধুই একজন সাম্প্রদায়িক হিন্দু অথবা মুসলমান।
ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করেছে। এটি মারাত্মক অন্যায়। আর এই সেদিন হামাস অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইলের নিরীহ মানুষদের হত্যা করল- এটিও ভীষণ অন্যায়। ইসরাইল বোমা মেরে গাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এটিও অন্যায়। এই অন্যায়কে এখন ধর্ম দিয়ে মুড়িয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। সেকারণে এই অন্যায়ের প্রতিবাদে যারা এখন উচ্চকিত তারা কেউ মানুষ নন। তারা হলেন মুসলমান অথবা ইহুদি- অথবা এই দুইয়ের সমর্থক ধর্মীয় গোষ্ঠী। ঠিক নিউ ইয়র্কের হিন্দু গোষ্ঠী বা মুসলমান গোষ্ঠীর মতো। অথবা আপনি চাইলে ভারত কিংবা বাংলাদেশের হিন্দুর দল ও মুসলমানের দল বলতে পারেন।
মানুষকে হত্যা করা বীরত্ব নয়, কাপুরুষতা। ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না যারা তারা হয় চুপ করিয়ে দেয়, শক্তি থাকলে গলা চেপে ধরে, আর ক্ষমতা ও অস্ত্র থাকলে হত্যা করে। ফিলিস্তিনের ভূমি দখলকারী ইসরাইল যেটা করছে নিশ্চয় তাদের ধর্ম সেটা করতে বলে দেয় নি। তেমনি হামাসের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। মনে রাখতে হবে হামাস একটি সংগঠন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নয়। ১৯৮৭ সালে যখন হামাস প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসাবেই ছিল। সেসময় গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।তাদের দ্বন্দ্বটা তখন ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে যার পরিচয় পিএলও- তাদের সঙ্গে।
একইভাবে দখলদার ইসরাইল সরকারের বিরোধিতা মানেই ইহুদী-বিদ্বেষ নয়।