ইতিহাস কাঁদে যখন উত্তরসূরি একই অপরাধে পা বাড়ায়…

0 comments 45 views 4 minutes read

একাত্তর শুধু রণক্ষেত্রের নয়, নারীর রক্ত, সম্ভ্রম, ও প্রতিরোধের ইতিহাস।
আর আজ, সেই ইতিহাসকেই যেন অপমানিত হতে দেখছি একটি স্বাধীন দেশের প্রগতিশীল শিক্ষাঙ্গনে।

চট্টগ্রামে এক নারী শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে হেনস্তা ও লাথি মারার ঘটনা আমাদের শুধু আহত করে না—
এই দৃশ্য যেন ১৯৭১-এর বিভীষিকার ছায়া হয়ে বর্তমানকে গ্রাস করে।
এই ঘটনা কেবল একটি মেয়ের ওপর সহিংসতা নয়, বরং গোটা জাতিসত্তার চেতনাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া।

নারী: ইতিহাসের প্রতীক, রাজনীতির শিকার

একাত্তরের যুদ্ধকালে নারীর শরীরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছিল যারা, তারা বুঝেছিল—
নারীর অসম্মান মানেই গোটা জাতির আত্মাকে আঘাত করা।
আজও সেই মানসিকতা বহন করে কিছু নতুন প্রজন্ম, যারা নামধারী সংগঠনের ব্যানারে ঘুরে বেড়ায়,
কিন্তু ভেতরে লালন করে পরাজিত ভাবধারার ঘৃণা ও সহিংসতা।

এই কী সেই বাংলাদেশ, যেখানে নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ছিল?
এই কী সেই প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শপথ নিয়েছে সমতা ও মানবিকতার?

পোশাক পাল্টেছে, চেতনা নয়

চট্টগ্রামের এই ঘটনায় নতুন কিছু নেই—
আসলে পুরোনো অপরাধই ফিরে এসেছে নতুন মুখে, নতুন ভাষায়,
কিন্তু একই হিংস্রতা নিয়ে।

যাদের পূর্বসূরি একাত্তরে করেছিল ধর্ষণ, আগুন ও নির্বিচার হত্যা,
তাদের উত্তরসূরিদের আমরা দেখি আজ—
ক্যাম্পাসে, সংগঠনের ব্যাজে, সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায়—
যারা নারীর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শেখেনি, বরং পায়ের নিচে পিষে ফেলার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যায়।

বিচ্ছিন্ন নয়, ধারাবাহিক অপচেষ্টা

এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলা এক ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা।
এটা আসলে একটা মনোভাবের ফসল—
যেখানে রাজনীতি মানে দখল, ক্ষমতা মানে নির্যাতন,
আর নারী মানে শুধুই দুর্বলতা বা শত্রু পক্ষের প্রতীক।

এই চিন্তা শুধু ভয়ঙ্কর নয়, ইতিহাসের মুখে চপেটাঘাত।
আর এই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকা মানেই—সহিংসতার সঙ্গে সহমত পোষণ করা।

একাত্তরের রক্ত ধোঁয়া হয়ে গেলে, আমরা সবাই পরাজিত

একটা জাতি যখন তার ইতিহাসকে ভুলে যায়, তখন সে নিজের ভবিষ্যৎও হারিয়ে ফেলে।
৭১-এর রক্ত, আত্মত্যাগ, সম্ভ্রম—এই চেতনার সিঁড়ি দিয়েই দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ।
এই বাংলাদেশ মাথা নত করার জন্য নয়।
এই বাংলাদেশ এক নারীর সম্মানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।

উপসংহার

চট্টগ্রামের ঘটনায় আমরা যা দেখেছি, তা কেবল একটি ব্যক্তিকে আঘাত নয়—
তা আসলে একটি আদর্শ, একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সমাজব্যবস্থার মুখে থুতু ছোড়া।

এখন সময়, শুধু প্রতিবাদের নয়—
সমাজের গভীরে থাকা সেই পরাজিত চেতনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের।
যারা নারীর গায়ে হাত তোলে, তারা বাংলাদেশ নামক মানচিত্রে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

একাত্তরের রক্ত যেন আমাদের চোখে ধোঁয়া না হয়ে যায়।
এই দেশ সেই রক্তে কেনা—মাথা নত করার জন্য নয়।

ভালো থাকবেন ভালোবাসবেন।
(আর ভুলের বিপরীতে দাঁড়াতে কখনো ভয় পাবেন না। ইতিহাস পাশে থাকবে।)

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing