আমার মা যেন থাকে দুধেভাতে

0 comment 93 views

আজকের দিনটা মায়ের জন্যে আজকে মা দিবস। কিন্তু মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানাবার জন্যে কি কেবলই একটি দিন! মা তো নিজের সকল দিয়ে সন্তানকে সারাটা জীবন ধরে সন্তানকে আগলে রাখেন। আর সন্তান দারুণ আড়ম্বরে বছরে এই একটি দিনে মায়ের কাছে নিজের আকুলতা প্রকাশ করবে? কেন?
এসব কথা একটু তুলে রেখে মা দিবসের ইতিহাসটা একটু বলে নিতে চাই। ইতিহাসটি সকলেই মোটামুটি জানেন। তবু সংক্ষেপে একবার বলে নিতে চাই।
আরও অনেক দিবসের মতো মা দিবসের শুরুটাও এই আমেরিকায় হয়েছিল। অনেক অনেক বছর আগে আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক নারী থাকতেন। অ্যান ছিলেন খুব শান্তিবাদী মানুষ। সমাজকর্মী হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। আর কাজ করতেন নারী অধিকার নিয়ে। সেসময় ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা করতেন অ্যান। নারীরা যেন স্বাবলম্বী হতে পারে সে জন্যে তাদের সহায়তা করতেন। অ্যানের একটা মেয়ে ছিল। মেয়েটির নাম ছিল অ্যানা মারিয়া রিভস জার্ভিস।
অ্যান মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতেন। একদিন ছোট্ট অ্যানার মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন— ‘আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটি তাদের অধিকার।
মায়ের সেই প্রার্থনা নাড়া দিয়েছিল ছোট্ট অ্যানাকে। ১৯০৫ সালের ৯ মে মারা যান ১৯০৫ সালের ৯ মে। এরপর মা অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকেই বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে অ্যানা। ১৯০৮ সালের ১০ মে অ্যানার মা অ্যানের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় চার্চসেবা। তারপরের বছর একই রকমের সেবা অনুষ্ঠিত হলো পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরে। আমেরিকার ইতিহাসে সেটিই ছিল প্রথম মা দিবস উদযাপন।

কিন্তু এখানেই থেমে যান নি অ্যানের মেয়ে অ্যানা জার্ভিস। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরলস দৌড়েছেন মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। কথা বলেছেন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। চিঠি লিখেছেন মন্ত্রণালয় আর ব্যবসায়ীদেরকে। দিনটিকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরপর সফলও হলেন কয়েক বছরের মধ্যেই। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন।
বিশ্ববাসী পেল তাদের আপনাপন মায়ের জন্যে একটি নির্দিষ্ট দিন। এ দিনটিতে বিশ্বের সকল মায়েরা থাকেন শীর্ষাসনে। সকল সন্তানদের তাদের মাকে ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি‘ বলার সুযোগ পাওয়ার দিন। মা দিবস খুব নিশ্চিত ভাবেই সকল সন্তানকে মায়ের সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদের মায়েদের কাছে নিয়ে আসে।
তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম চিহ্ন পাওয়া যায় গ্রিস এবং রোমে। প্রাচীন গ্রিকরা গ্রিক দেবতাদের মা রিয়ার সম্মানে উদযাপন করতো বসন্ত উৎসব। রোমানরা তাদের দেবীদের মা সাইবেলীর উদ্দেশে পালন করত বার্ষিক উৎসব।
প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় যথাযোগ্য ভাবে। মায়ের জন্য সন্তানের ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের। তারপরও নির্দিষ্ট একটি দিন মাকে সেলিব্রেট করাই হচ্ছে মা দিবসের উদ্দেশ্য। কিন্তু কীভাবে এলো এই দিনটি? কীভাবে হলো এই দিনটির সূচনা? আর কীভাবেইবা পৃথিবীজুড়ে একটা উৎসবমুখর দিনে পরিণত হলো?
আসলে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের চিন্তা থেকেই মা দিবসের সূচনা। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে। তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম চিহ্ন পাওয়া যায় গ্রিস এবং রোমে। প্রাচীন গ্রিকরা গ্রিক দেবতাদের মা রিয়ার সম্মানে উদযাপন করতো বসন্ত উৎসব। আর রোমানরা তাদের দেবীদের মা সাইবেলীর উদ্দেশে পালন করতো বার্ষিক উৎসব। আর এটাই কালক্রমে মা মেরীর সম্মানে লেস্টের চতুর্থ রোববারে রূপান্তর হয়ে যায় খ্রিস্টীয় উৎসবে। ইংল্যান্ড বা স্কটল্যান্ডে এই চতুর্থ রোববারই ক্রমশ মাদারিং সানডে হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রিটেনে এখনও মাদারিং সানডে জনপ্রিয়।

তবে মা দিবস কি করে এল এটি আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো মায়ের জন্যে সন্তানের ভালোবাসাটাকে স্বীকৃতি। আর সন্তানের জন্যে মায়ের যে নির্ভেজাল ভালোবাসা- সেটা তো সর্বজন বিদিত। প্রকারান্তে মায়ের ভালোবাসাকে সবখানে ছড়িয়ে দেওয়াটাই মা দিবসের লক্ষ্য আসলে। আর আমাদের এখনকার যান্ত্রিক পৃথিবীর জন্যে এই ভালোবাসাটুকু খুব দরকার।
এই মুহূর্তে একটি ঘটনা মনে পড়ল। গেল বছর বাংলাদেশের শরীয়তপুরে লামিসা নামে এক শিশু পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ কোত্থেকে কারও পিস্তল থেকে ছোঁড়া একটা গুলি এসে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা লামিসার গায়ে বিঁধে গেল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার যন্ত্রণাটা বলার মতো ভাষা-ক্ষমতাও লামিয়ার তৈরি হয় নি তখন। আর মায়ের যন্ত্রণা? লামিয়ার যদি পৃথিবীর সকল ভাষাও জানতেন তবু সেই কষ্ট কি বর্ণনা করতে পারতেন?
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও মঙ্গল কাব্যধারার শেষ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে মা ঈশ্বরী পাটনী দেবীর কাছে বর চেয়ে বলেছিলেন, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে”। এটি আসলে সন্তানের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়েদের চিরকালীন এক চিরন্তনী ভাষ্য।
আজকে সন্তানদের পালা। আজকে মা দিবসে আমার চাওয়া, আমার মা যেন থাকে দুধেভাতে।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing