আজ আমার বন্ধুর জন্মদিন

0 comment 68 views

আজ আমার বন্ধুর জন্মদিন। আমার কাছে বন্ধু অনেক বড় একটা ব্যাপার। আজকাল অবশ্য অনেকেই বন্ধুত্বকে ভালোবাসা কিংবা ভালোবাসাকে বন্ধুত্ব বলে অভিহিত করছেন। কেউ কেউ তো সন্তানকেও বন্ধু বলছেন। আসলে তাঁরা বন্ধুত্বপূর্ণ আর বন্ধু- এ দুয়ের মাঝামাঝি এসে গুলিয়ে ফেলেছেন। তো আমি তো অনেক নগণ্য মানুষ, আমার কথা আপনারা শুনবেন কেন! তার চেয়ে বিখ্যাত কারও কথা বলি, ধরুন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় অনেক তফাৎ আছে, কিন্তু ঝট্‌ করিয়া সে তফাৎ ধরা যায় না। বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকী। বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল। কিন্তু ভালোবাসার পোশাক একটু ছেঁড়া থাকিবে না, ময়লা হইবে না, পরিপাটি হইবে। বন্ধুত্ব নাড়াচাড়া টানাছেঁড়া তোলাপাড়া সয়, কিন্তু ভালোবাসা তাহা সয় না।”

এই হলো বন্ধু যার সঙ্গে কোনো আড়াল থাকা চলে না। কেননা বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে ‘নাড়াচাড়া টানাছেঁড়া তোলাপাড়া সয়’। আমাদের জীবনে দুটি প্রধান সম্পর্ক থাকে, একটি পরিবার, আরটি বন্ধু। দুয়ের মাঝে কার যে অধিক গুরুত্ব এইটি নির্ধারণ করা সত্যিই মুশকিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই মুশকিল ব্যাপারটি সকলের জীবনে ঘটে না। আসলে বেশিরভাগের জীবনেই ঘটে না। কারও কারও জীবনে হয়ত ঘটে। কেননা বন্ধু হওয়ার মতো বন্ধু মানুষ হওয়ার মতো মানুষের অভাব বড়। আচ্ছা এইটি কি মজার ব্যাপার হলো? আপনার কাছে এমন একজন মানুষ নেই যাকে আপনি বন্ধু ভাবতে পারেন- এইটি তো দুঃখজনক ঘটনা!

তবে আমার বেলায় এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে নি। ওই যে শুরুতেই বললাম- আজ আমার বন্ধুর জন্মদিন!

আজ আমার বন্ধু মইনুলের জন্মদিন। মইনুল হলো মইনুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ থেকে আরেকটু ধার করে বলি, “বন্ধু আমাদেরই মত দোষে গুণে জড়িত মর্ত্ত্যের মানুষ হইয়া থাক্‌ এই আমাদের আবশ্যক। আমাদের ডান হাতে বাম হাতে বন্ধুত্ব। আমরা বন্ধুর নিকট হইতে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।”

হ্যাঁ, দোষে গুণে জড়িত এই পৃথিবীর মানুষ মইনুল, আমার মতোই। আমি যা, আমি তাই, স্বর্গীয় দূত হয়ে থাকবার ভানটুকু নেই- মইনুলের মতোই। সেজন্যেই মইনুল আমার বন্ধু। আমার তাঁর মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই মইনুলকে চাই।

মইনুলের জন্মদিন এলে একটি কথা আমি খুব বলি। সে কথাটি হলো, আজকের দিনটি না এলে এই মানুষটির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটত না। এই মানুষটি হলেন বন্ধু মইনুল। মইনুল ভাইকে আজকে আমাদের সকলের কাছে এনে দিয়েছে ২০ ফেব্রুয়ারি। তারপর ২০ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জানাই কৃতজ্ঞতা। কেননা আজকে ২০ ফেব্রুয়ারিই আমাদের সকলের কাছে মইনুলকে এনে দিয়েছে।

অথচ মইনুল ইসলাম মানুষটি কঠিনরকম ব্যবসায়ি মানুষ। একথাটি আগেও কোনো এক লেখায় বলেছিলাম। বলেছিলাম, কঠিনরকম ব্যবসায়ি বলেই এ বয়সে এসেই মইনুল ভীষণ রকম সফল হয়ে উঠেছেন। আরএমন মানুষেরা সাধারণত বন্ধু হন না। কিংবা বলা যেতে পারে,  এমন মানুষেরা বন্ধু হিসেবে উৎকৃষ্ট হন না। কিন্তু মইনুল একজন উৎকৃষ্ট বন্ধু হয়েছেন- সে বন্ধু আমারই।

এই অবস্থানে থাকা মানুষেরা সাধারণত ব্যবসায়িক স¤পর্কটি গড়েন কেবল। কেননা বন্ধুত্বের যে সংজ্ঞা ওর প্রধানতম উপাদানটি- আবেগ। একজন কঠিনরকম ব্যবসায়ি ভীষণরকম আবেগী মানুষ হয়ে উঠে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠবেন- ব্যাপারটা মেনে নিতে মন হৈহৈ রৈরৈ করে সায় দিয়ে আপ্লুত হয়ে উঠবে, এমনটি ভেবে নেয়ার পক্ষে মনের কাছে কোনো কারণ বিদ্যমান নয়।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় আর কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বন্ধু। শৈলজানন্দ ছিলেন  চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার আর নজরুল ছিলেন কবি। শৈলজানন্দ আত্মজীবনীমূলক বইটির নাম “কেউ ভোলে কেউ ভোলে না”। নজরুলের কবিতা আছে, আছে কবিতা থেকে গান- “কেউ ভোলে না কেউ ভোলে”। তো শৈলজানন্দ তাঁর আত্মজীবনী ‘কেউ ভোলে কেউ ভোলে না’-তে লিখেছেন, “আমি রানিগঞ্জে, নজরুল সিহারসোল রাজার স্কুলে। মাইল দু’য়েকের ছাড়াছড়ি। থার্ড ক্লাসে এসে মিললাম দু’জনে। সেই টানে ধর্মাধর্ম নেই, বর্ণাবর্ণ নেই—সৃষ্টির টান, সাহিত্যের টান”।

বন্ধুতে ধর্মাধর্ম থাকে না। থাকে না বর্ণাবর্ণ। থাকে টান। আমি কিংবা মইনুল সৃষ্টিশীল কেউ নই। নেই সাহিত্য প্রতিভাও। কিন্তু টানটা আছে। ওই টানেই আমরা বন্ধু। আজ আমার সেই বন্ধুর জন্মদিন। আজ আমার বন্ধু মইনুলের জন্মদিন। আজ আমার খুব আনন্দ।

মইনুলকে আমার ও আমার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছে। শুভ জন্মদিন বন্ধু।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing