পৃথিবীর ইতিহাসে কিছু শব্দ আছে, যেগুলো কাঁপিয়ে তোলে আমাদের মানবতা—
‘শরণার্থী’ তেমনই একটি শব্দ।
এটি শুধু একটি পরিচয় নয়, এটি এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার নাম;
একটি ছিন্নমূল জীবনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে নেই নিরাপত্তা, নেই নিশ্চয়তা—তবুও রয়েছে বেঁচে থাকার সাহস।
আজ ২০ জুন, বিশ্ব শরণার্থী দিবস।
এই দিনে আমরা স্মরণ করি সেই কোটি কোটি মানুষের কথা,
যারা যুদ্ধ, সহিংসতা, নিপীড়ন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে
নিজ ভূমি, নিজ আকাশ, নিজের শেকড় ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
🔹 “Whoever, wherever, whenever — everyone has the right to seek safety.”
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR)-এর এই বার্তাটিই আমাদের আজকের দিনটির মূল চেতনা।
মানবতার এই বিশ্বে কারোই জীবনের অধিকার অন্যের ঘৃণার নিচে চাপা পড়তে পারে না।
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া কোনো দয়া নয়—এটা মানবিক দায়িত্ব।
🔸 শরণার্থী মানেই কি অপরাধী?
দুঃখজনকভাবে, অনেক জায়গায় শরণার্থীদের দেখা হয় বোঝা বা হুমকি হিসেবে।
কিন্তু তারা তো নিজের ইচ্ছায় ভিটেমাটি ছাড়ে না!
তাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, কিন্তু চোখে থাকে বাঁচার আকুতি।
তাদের মুখে দেশ নেই, ঠিকানা নেই—তবুও তারা আমাদেরই মতো মানুষ।
তাদের স্বপ্ন, তাদের শিশুর হাসি, তাদের কষ্ট—সবই মানবতার অংশ।
🔸 বাংলাদেশ ও শরণার্থী বাস্তবতা
বাংলাদেশও এক সময় শরণার্থীর দেশ ছিল।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কোটি মানুষ পার হয়েছিল সীমান্ত, আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশে।
আজ আমাদের দেশ আশ্রয় দিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে।
এই মানবিকতা আমাদের জাতিগত চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
🌿 মানবতা আজ সীমানা চায় না, সহানুভূতি চায়।
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমাদের দায়িত্ব—
✅ সচেতন হওয়া
✅ সহমর্মিতার হাত বাড়ানো
✅ ঘৃণার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা
✅ আশ্রয় চাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো
আমরা যদি একবার ভাবি—আজ যারা শরণার্থী, কাল হতে পারি আমরাও—
তবে হয়তো হৃদয়ের দরজাটা একটু বেশি খুলে ফেলতাম।
⸻
ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি শিশু, প্রতিটি মা, প্রতিটি শরণার্থী—
তাদের অধিকার হোক আমাদের সম্মানের অংশ।