কখনো কখনো একজন মানুষও এক একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। আমরা বিস্ময় নিয়ে দেখি সেই ব্যক্তিটি একেবারেই একলা। কিন্তু যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়েও উচ্চতায় সে অনেক বেশি। ঠিক এক বছর আগে, হ্যাঁ আজকের দিনটিতেই, আমাদের এই প্রিয় নিউ ইয়র্ক নগরেই প্রতিষ্ঠানের মতো উচ্চতার একজন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। মেরেছিল বড় নৃশংসতায়। আমরা শিউরে উঠেছিলাম। পুরো নিউ ইয়র্ক শিউরে উঠেছিল। শিউরে উঠেছিল বিশ্ব।
আমরা খবরে পড়েছি, ফাহিম সালেহর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল কেটে টুকরো করা। কিছু টুকরো বড় আকারের গার্বেজ ব্যাগেও ভরে রাখা হয়েছিল। পাশেই ছিল একটি বৈদ্যুতিক করাত, তখনো সেটির তার ছিল সকেটের সঙ্গে যুক্ত।
হ্যাঁ, আমরা ফাহিম সালেহর কথাই বলছি। মাত্র ৩৩ বছর বয়সি তরুণ একটা ছেলে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরবর্তীতে নাইজেরিয়ায় গোকাডা নামে একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে।ডিজিটাল স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করতেন শুরু থেকেই।
যে অ্যাপার্টমেন্টটিতে থাকতেন ফাহিম, তার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা। নিজের কেনা ওই অ্যাপার্টমেন্টেই ফাহিমকে খুন করা হয়। ফাহিম সালেহ বড় হয়েছেন নিউ ইয়র্কেই। নিউ ইয়র্কের গণমাধ্যম তাকে ‘টেক মিলিওনিয়ার’ আখ্যা দিয়েছিল।
ফাহিম সালেহ নিজের সম্পর্কে নিজের ওয়েবসাইটে লিখেছিলেন অন্ট্রেপ্রেনিওর, ইনভেস্টর, ড্রিমার; অর্থাৎ উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, স্বপ্নবাজ।
স্বপ্নবাজ এই ছেলেটিকে অমন নৃশংসভাবে মেরে ফেলল। আর যে মেরে ফেলল সে দূরের কেউ নয়। ফাহিমের কাছেরই জন সে। টাইরিস ডেভন হ্যাসপিল তার নাম। ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী সে। আমরা পত্রপত্রিকার খবর থেকে জেনেছি, হ্যাসপিল নামের এই লোকটি খুব ঠাণ্ডা মাথায় খুব পরিকল্পিতভাবে ফাহিমকে খুন করেছে। আর নৃশংস খুন করা এই খুনিটি আদালতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছে।
ফাহিম হত্যাকাণ্ডের বিচার আদালত করবেন। দোষী বা নির্দোষের সিদ্ধান্তটিও আদালতই নেবেন। যে হত্যাকারি ফাহিম হত্যার মতো এমন বীভৎস ও নৃশংস খুন করতে পারে, সে এই পৃথিবীর যে কোনো জায়গার জন্যেই বিপদজনক। তার আশপাশের সকলেই দারুণভাবে অনিরাপদ। এই খুনির অপসারণ খুব জরুরি। সামাজিক নিরাপত্তার জন্যেই জরুরি।
ফাহিমের মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে। ফাহিম হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই অপরাধের ওজন বাড়তেই থাকবে। আমরা ফাহিম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
রূপসী বাংলা, ১৩ জুলাই ২০২১।