জয় হোক শুভশক্তির: শরৎ ও শারদীয়া দুর্গাপূজা

0 comments 21 views 2 minutes read

শ্রাবণের বিদায়ে ভাদ্র এসে বসে, ভাদ্রের পরেই আশ্বিনের আগমন। এই ভাদ্র-আশ্বিন মিলনেই আসে শরৎকাল—একটি ঋতু, যা আগমনের আগে কোনো সতর্কতা জানায় না। হঠাৎ এক পসলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় পথ ও ধানক্ষেত, তারপর আসে রোদ—তেজস্বী, ঝলমলে দুপুরের রোদের খেলা। সন্ধ্যার আকাশে আবার মেঘের আনাগোনা। নদী তীরের কাশফুল, গাছে শিউলি, বেলি আর জলে শাপলা—প্রকৃতির স্বর্ণালী উপহার। পুকুরপাড়ের তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি গন্ধ, আর সেই তাল দিয়ে নতুন ধানের চালে পিঠা, পায়েস—এ সবই শরৎকে করে পূর্ণাঙ্গ।

শরৎ শুধু প্রকৃতির খেলা নয়। শরৎ মানেই শারদীয়া পূজা—দেবী দুর্গার আরাধনা। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে দশ দিনের পূজা চলে, যাকে বলা হয় দেবীপক্ষ। সূচনার অমাবস্যা হল মহালয়া। কৃত্তিবাসীর রামায়ণে দেখা যায়, শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনা রাবণবধের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এই প্রাচীন কাহিনিই আমাদের জানায়—শারদীয়া পূজা কেবল উৎসব নয়, শুভশক্তির বিজয় ও অশুভের বিনাশের প্রতীক।

আমাদের ছেলেবেলায় পূজা মানে আনন্দ। বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-মজা, পিঠা-পায়েসের খোঁজ, আর অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়ার চুপিচুপি দুষ্টুমি। ধর্ম যার যার—কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম—কেউ কৃতজ্ঞ, কেউ উদাসীন, কিন্তু আনন্দে আমরা একত্র। চন্দনের ফোঁটা, আরতি, পায়েসের গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অনন্য সৌন্দর্য ও মিলনের উৎসব।

দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধ করে অশুভ শক্তির অবসান ঘটান। এই বিশ্বাস আমাদের শেখায়, পৃথিবীতে এখনও মানুষ চায় শুভশক্তির জয় ও অশুভ শক্তির বিনাশ। আদিকবি বাল্মীকি রামায়ণে যেমন আদর্শ মানুষের চিত্র এঁকেছেন—স্বামী, স্ত্রী, ভাই, শাসক—শারদীয়া পূজাও আমাদের মনে সৎ, সুন্দর ও দায়িত্বশীল থাকার শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়।

এই শরৎকালেও আমাদের প্রার্থনা—দেবী দুর্গা আসুন, ভেদ করুন মানুষের ভেতরে লুকানো মহিষাসুরকে।
জয় হোক শুভশক্তির।
সবাইকে শারদীয়া দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।

Leave a Comment

You may also like

Copyright @2023 – All Right Reserved by Shah’s Writing