‘মাইক’ শব্দটি মাইক্রোফোনের সংক্ষিপ্ত প্রতিশব্দ। এই প্রতিশব্দ আমাদেরই তৈরি করা। ‘মাইক’ শব্দটি কানে এলেই আমাদের প্রজন্মের সবারই ‘কল-রেডী’ মাইকের কথা মনে পড়ে। কল-রেডী মাইক সার্ভিসকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী বলা হয়। সাত মার্চের ছবিটা চোখের সামনে মেলে ধরলেই দেখা যায় বঙ্গবন্ধু ডান হাতের তর্জনি উঁচিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন, আর সে ভাষণ উপস্থিত দশ লাখ মানুষের শ্রবণে পৌঁছে দিয়েছিল ঢাকার প্রথম মাইক সার্ভিস ‘কল-রেডী’।
১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে হরিপদ ঘোষাল ও দয়াল ঘোষাল দু ভাই থাকতেন। দেশভাগের পরপর এই দু ভাই মিলে আরজু লাইট হাউজ নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন একটি আলোকসজ্জার দোকান। কিন্তু সেসময় আলোকসজ্জার আরও অনেক দোকান গড়ে ওঠায় আশঙ্কায় পড়েন হরিপদ ও দয়াল ঘোষ। তখন হরিপদ তাদের দোকানে লাইটের পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেমও যুক্ত করার কথা ভাবলেন। এখান থেকেই কল-রেডী মাইক সার্ভিসের যাত্রা শুরু। কল-রেডী নাম রাখার কারণ হলো, ডাক দিলেই তারা মাইক নিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এরপর ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ‘৭০-এর সাধারণ নির্বাচন থেকে ‘৭১-এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সমাবেশে মাইক সার্ভিস দিয়ে এসেছে কল-রেডী।
দয়াল ঘোষ ও হরিপদ ঘোষ ভাইয়েরা এখন নেই। কিন্তু কল-রেডী আছে এখনও। হরিপদ ঘোষের ছেলে সাগর ঘোষ এখন কল-রেডীর হাল ধরে আছেন। আছে ৭ মার্চে কল-রেডীর যে মাইক্রোফোনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেটিও। সে মাইক্রোফোন আর কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় নি।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন সংবাদপত্র